জয়পুরহাট পৌর শহরের বিশ্বাসপাড়া মহল্লার শেষ মাথায় অবস্থিত হযরত ফাতেমা (রা:) কওমি হাফেজিয়া বালিকা মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সির অপকর্ম সম্পর্কে বের হতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ধর্ষণের অভিযোগে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সিকে রোববার বিকালেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার সকালে ওই মাদ্রাসা এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজন জানান, ২০২২ সালে এনামুল হকের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বালিকাদের জন্য হাফেজিয়া মাদ্রাসা চালু করেন বিশ্বাসপাড়া মহল্লার আজিজুল হক ফেন্সি (৫৭)। মাদ্রাসার নাম দেন হযরত ফাতেমা (রা:) কওমি হাফেজিয়া বালিকা মাদ্রাসা।
এলাকার অনেক মেয়ে এখানে ভর্তি হলেও আজিজুল হকের আচরণ সন্দেহ জনক হওয়ায় গত বছর শাপলা নামে এক মেয়েকে মাদ্রাসা থেকে ফেরত আনেন স্থানীয় অভিভাবক ফরহাদ। অনেক দূর থেকে বাবা-মা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসলে কথা বলতে দেওয়া হয়না।
১ম -৩য় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় মাথা থেকে পা সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা বোরকা। মাদ্রাসার শিক্ষক হচ্ছেন আজিজুল নিজে, স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে। বাইরের কারো সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। সব সময় ভেতর থেকে গেট বন্ধ থাকে। স্থানীয় রিকসাওয়ালা আবদুল করিম জানান, ওই মাদ্রাসা থেকে বোরকাপড়া দুই মেয়ে প্রায় কথিত বাগানবাড়িতে নিয়ে যান। সোজা রাস্তায় না গিয়ে অনেক রাস্তা ঘুরে বাগানবাড়িতে যাওয়ায় বিষয়টি সন্দেহ জনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় জাহানী বেগম, মানিক হোসেন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ওই মাদ্রাসাকে ঘিরে অপকর্মের কথা শোনা যায়। বাড়ির মালিক এনামুল হক জানান, অপকর্মের অভিযোগ পেয়ে ভাড়া বাতিল করা হলেও বাড়ি ছেড়ে যায়নি আজিজুল। এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠক হলেও কাজ হয়নি বলে অসহায়ত্বের কথা জানান, পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হায়দার আলী পলাশ।
উল্লেখ, হযরত ফাতেমা (র:) কওমি হাফেজিয়া মহিলা মাদরাসাতে ধামুইরহাট উপজেলার এক অসহায় শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো পড়াশোনা করত। ঈদের ছুটি হলেও মাদরাসাতে বেতন বাঁকি থাকায় ওই শিক্ষার্থীকে ছুটি দেওয়া হয়নি মর্মে এজাহারে উল্লেখ করেছেন পিতা শাহ আলম । ওই শিশু শিক্ষার্থীকে কৌশলে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সির বিরুদ্ধে।
রোববার মেয়েটি সুকৌশলে পালিয়ে মাদরাসার পাশে এক বান্ধবীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী তার সব ঘটনা খুলে বলেন বান্ধবীর পিতাকে। বান্ধবীর পিতা তাৎক্ষণিক ওই ছাত্রীকে জয়পুরহাট সদর থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মাছুয়া বাজার থেকে আজিজুলকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়পুরহাট থানার উপপরিদর্শক রুবেল হোসেন জানান, আজিজুল হক ফেন্সিকে ধর্ষণের অভিযোগে মাছুয়া বাজার এলাকা থেকে রোববার বিকালে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে সোমবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ ।
ধর্ষণের স্বীকার মেয়েটির বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে জয়পুরহাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রোববার বিকালে একটি মামলা দায়ের (নং ৩০, তারিখ ২৩ জুন,২০২৪) করেছেন বলেও জানান ওসি হুমায়ন কবীর । ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে ২৬ জুন মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জয়পুরহাটের নারী সংগঠন গুলো।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24