প্রতারণা করে ১৪ বছরে একে একে ২৮৬টি বিয়ে করেছিলেন লালমনিরহাটের যুবক জাকির হোসেন বেপারি (৪৩)। এরপর ২০১৯ সালে মিরপুরের এক নারীর করা ধর্ষণ মামলায় বিগত ৪ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন তিনি।
গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) ভোরে কারাগারে অসুস্থ হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকির। যুবকের মৃত্যুর পর তার মুখ দেখতে আসেনি ২৮৬ জন স্ত্রীর একজনও। এমনকি মৃত্যুর পর তার লাশ গ্রহণ করতে রাজি হননি কোনো স্ত্রী। দাফনের সময়েও দেখা যায়নি কাউকে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ওই আসামিকে অন্য কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যান জাকির। কারাবিধি অনুযায়ী ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, মৃত্যুর পর পুলিশের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয় ওই বন্দির। এরপর তার ভাইদের উপস্থিতিতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মেহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু সে সময় তার কোনো স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ২০০৫ সালে ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন জাকির। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে প্রতি মাসেই বিয়ে করতেন তিনি। বিয়ের পর কৌশলে কিংবা ভয় দেখিয়ে ওইসব নারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা। তা দিয়ে চাকরি বা ব্যবসা ছাড়াই বিলাসী জীবনযাপন করতেন। এভাবে ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত মোট ১৪ বছরে প্রতারণামূলক নানা কৌশলে ধনাঢ্য পরিবারের ২৮৬ নারীকে বিয়ে করেন। একাধিক নারীর প্রতারণার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মৃত্যুর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই বন্দি ছিলেন জাকির। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবদ্দশায় জাকিরের নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে তারা অস্বস্তিতে ছিলেন। নিজেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। এলাকায় লাশ নিলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় স্বজনরা প্রথমে তাকে ঢাকায়ই দাফন করতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য গ্রামে দাফন করা হয়।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নান্নু জানান, জাকিরের প্রতারণা করে বিয়ের খবর এলাকায় শুনেছি। তবে সে এলাকায় বেশি আসত না। জেলখানায় থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার পর পরিবারের লোকজন লাশ এনে দাফন করেছে।
প্রসঙ্গত, মিরপুরের এক তরুণীর করা ধর্ষণ মামলায় (২২-১১-১৮) জাকিরকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় আরেক মামলা করেন মণিপুরি পাড়ার একটি ছাত্রী হোস্টেলের ২৬ বছর বয়সী এক নারী। অভিযোগের ভিত্তিতে জাকির ও তার সহযোগী জায়েদা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। পরে জাকিরকে রিমান্ডে নিলে জবানবন্দিতে পুলিশ জানতে পারে জাকির শুধু ধর্ষণ নয়, ১৪ বছরে বিয়ে করেছেন ২৮৬টি।