মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সাংবাদিক পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইলিং করে চাঁদা আদায়ের সময় চাঁদার টাকাসহ মাছুম আহমদ (৩৪) নামের এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাছুম জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাকে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জুড়ী শহরের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত বাদী হয়ে সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি ও আদায়ের অভিযোগে দুইজনকে আসামি করে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অপর আসামি হলেন- পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের খলিলুর রহমানের ছেলে জালালুর রহমান (৩০)।
বাদীর বক্তব্য ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মাছুম আহমদ লেখাপড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোননি। বছর দু’য়েক পূর্বে চালাতেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা। হঠাৎ করে হয়ে ওঠেন স্বঘোষিত সাংবাদিক। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার আসকারায় চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিজ বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আব্দুল বাছিত। দরজায় ডাকাডাকি শুনে দরজা খোলে একজন মহিলাসহ মাছুম ও জালালুরকে দেখতে পান। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মহিলা ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং মাছুম মোবাইলে ভিডিও করতে থাকেন। জালালুর দরজার বাইরে পাহারায় থাকেন। এক পর্যায়ে মহিলাকে বিদায় করে মাছুম ভিডিওটি দেখিয়ে বলেন- আপনি এ মহিলাকে নিয়ে রুমে ছিলেন, এই ভিডিওটি আমরা ভাইরাল করে দেব। এতে আপনার সম্মানহানি হবে। এটা না হতে চাইলে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে। ভুক্তভোগী বাছিত উপস্থিত তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দেন এবং আসামি দুজন চলে যান। পরে অবশিষ্ট টাকার জন্য বাছিতকে বারবার চাপ দিতে থাকলে বাছিত নিজ পরিবার ও আত্মীয়দের বিষয়টি জানান। সোমবার কয়েকজনকে আশপাশে রেখে কলেজ রোডস্থ জালালুরের দোকানে বিশ হাজার টাকা নিয়ে মাছুম ও জালালুরকে দেন। তারা টাকা নেয়ার সময় ওই লোকজন হাতেনাতে ধরে। তাদের শোরগোলে লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ মাছুমকে গ্রেফতার করে এবং জালালুর সটকে পড়ে। পরে পুলিশ মাছুমকে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাছুম এক সময় পেশাদার সিএনজি চালক হিসেবে কাজ করতেন। পরে এক নেতার সুবাদে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি পদ লাভ করেন মাছুম। যুবলীগ নেতা হওয়ার পর মাছুম বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও সরকারি সুবিধা আদায়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এছাড়া মাধ্যমিক পাস না করেও দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশন এশিয়ান টিভির স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ ভাগিয়ে নেন মাছুম। এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে সে আরো বেপোরোয়া হয়ে সরকারি অফিস, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা অফিসে বেপোরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করে। তার গ্রেফতারের পর পুরো উপজেলার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেন।
আব্দুল বাছিত জানান, মাছুম জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তিনি আগে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতেন। গণঅভ্যুত্থানের পর ফেসবুকে সংবাদ মাধ্যমের নাম দিয়ে বিভিন্ন পেজ খোলে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলতেন। স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতার আসকারায় তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি মাছুম আহমদকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে
JN