জুড়ীর নিরব পোল্ট্রি ফার্মের দুষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিকে নির্দেশনা দিলেন পরিবেশমন্ত্রী

মৌলভীবাজার, প্রতিনিধি।।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের জামে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে একটি অবৈধ লেয়ার মুরগির খামারের দুর্গন্ধে কয়েক গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ । এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ফার্মের মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত (৩১ মে) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ডিজিকে নির্দেশনা দিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি।

জানা যায়, পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামে নোংরা পরিবেশে ‘নিরব পোল্ট্রি ফার্ম’ নামক একটি লেয়ার মুরগির খামার চালিয়ে আসছেন সামছু মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম। প্রাণী সম্পদ দপ্তরের নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ভাবে ফার্ম চালু রাখা হয়। ফার্মটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার জন্য এলাকাবাসী আবুল কাশেমকে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু এলাকাবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফার্ম চালিয়ে যেতে থাকে আবুল কাশেম৷
ভুক্তভোগীরা জুড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার , সিলেট কার্যালয় এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

ভোক্তভোগী এলাকাবাসী লিখিত আবেদন থেকে জানা যায়,, উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার ২০ ফুট দুরত্বে সামছু মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে ‘নিরব পোল্ট্রি ফার্ম’ নামে একটি লেয়ার মুরগির ফার্ম স্থাপন করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লেয়ার মুরগির ফার্ম চালিয়ে যাওয়ায় আশপাশের লোকজন এর দুর্গন্ধে মারাত্মক দুর্ভোগ পোয়ান। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখবিসুখে আক্রান্ত হতে থাকে। ভবানীপুর গ্রামের নাসির মিয়া অভিযোগ করেন, পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধে শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী হতু বেগম মারা গেছেন। একই গ্রামের মইয়ব আলী বলেন, শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশু সন্তান মারা গেছে।

এলাকাবাসী ২১ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তদন্ত করে সত্যতা পান। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি সাধনের জন্য পরিবেশ সরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা- ৭ মোতাবেক গত ৩ মে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বনানী দাসের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম শুনানী করেন। শুনুনীতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া লেয়ার খামার চালু রাখার বিষয়টি আবুল কাশেম স্বীকার করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মুঠোফোনে জানান জুড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রমাপদ দে বলেন, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ভাবে লেয়ার মুরগির ফার্ম চালু রাখায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় আবুল কাশেমকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি। আবুল কাশেমের নিবন্ধন বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো, মাইদুল ইসলাম বলেন, জুড়ীতে পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে আবুল কাশেম নামে জনৈক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একটি লেয়ার পোল্ট্রি খামার পরিচালনা করে আসছিল। এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করায় ছাড়পত্র বন্ধ রাখা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড, আবদুল হামিদ বলেন, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার একটি লেয়ার মুরগির খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ