পরকীয়া প্রেমীকের সাথে স্কুল চলাকালীন সময় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কাউকে কিছু না বলে সুযোগ বুঝে দুই সন্তানের জননী মোছাঃ সানজিদা পারভীন (৩৩) নামে এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা উধাও হয়েছে। সানজিদা পারভীন নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের ৬৮ নং পূর্ব তাহের পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং ইসবপুর ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।
ভূক্তভোগী স্বামী ইউপি সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, জানান, নওগাঁ জেলার বদলগাঁছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের দুদু মন্ডলের মেয়ে মোছাঃ সানজিদা পারভীনকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। সংসার জীবনে তাদের দুটি সন্তান জন্ম নেয়। দুই সন্তানের মধ্যে বর্তমানে ৪ বছর বয়সী একটি পুত্র ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।
এরইমাঝে হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় সূত্রে সানজিদা ফরিদপুর জেলার সেহাব নামে এক যুবকের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জরিয়ে পরে এবং বিষয়টি পরিবারের লোকজন জেনে ফেললে তাকে অনেক বুঝিয়ে শোধরাবার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি তার স্মার্ট ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোন বিশেষ লাভ হয়নি।
ফলে গোপনে সে আমাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে আরেকটা স্মার্ট ফোন কিনে ওই ছেলেটির সাথে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিল এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে গত ০৭ জুন রোজকার মতো বাড়ি থেকে স্কুলে যায় এবং সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ বুঝে তার পরকীয়া প্রেমিক সেহাবের সাথে পালিয়ে যায়। অনেক আগে থেকেই সে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত। স্কুল গিয়ে প্রতিনিয়ত লম্বা সময় ধরে ফোনে আলাপ করা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষও তাকে সাবধান করেছিল।
৬৮ নং পূর্ব তাহের পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত মোহাম্মদ আমানুল্লাহ এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মোছাঃ সানজীদা পারভীন গত ৭ই জুন বিদ্যালয় চলাকালীন সময় দুপুর ২ টার দিকে কাউকে কিছু না বলে এবং ছুটির মৌখিক বা লিখিত কোন প্রকার আবেদন কিংবা কোন শিক্ষকদেরও অবগত না করেই স্কুল থেকে চলে যায়। বিদ্যালয় ছুটি হওয়া পর্যন্ত সে আর ফিরে আসেনি। তার মুঠোফোনে ফোন করলে বাড়ির অন্য কেউ ফোনটি রিসিভ করে জানায় সানজিদা পারভীন বাড়িতেও ফিরেনি। অনেক খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান না পাওয়ায় তার স্বামী ইউপি সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম ধামইরহাট থানায় একটি জিডি করেছেন। যাহার জিডি নং ৩৫৪, তারিখ- ০৮ জুন ২২ ইং। পরবর্তীতে জানা যায়, পরকীয়া প্রেমের টানে তিনি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছেন।
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, ৭ তারিখের পর থেকে সে কোন প্রকার ছুটি ও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ না করায় অনুপস্থিত দেখিয়ে শিক্ষিকা সানজিদার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র লিখেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, সানজিদার দুই সন্তান মাকে ফিরে পেতে শোকে কাতর হয়ে পরেছে এবং সবসময় কান্নাকাটি করছে। অবুঝ এই দুই শিশুর চোখে মুখে একটিই ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে বাবা-মা দুজনকে একসাথে পাশে চায় তারা।
স্থানীয়রা জানান, বাচ্চা দুটির উপর কোন প্রকার বিরুপ প্রভাব সৃষ্টির পূর্বেই স্কুল শিক্ষিকা সানজিদার উচিৎ নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ফিরে এসে ক্ষমা চেয়ে সবকিছু ঠিক করে নেওয়া।
সানজিদা পারভীনের ভাই মোঃ হিরো এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তার বোন জামাই ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খুবই ভালো মানুষ। সানজিদা তার সংসারে খুবই সুখে ছিল। তার এই কাজ করা উচিৎ হয়নি। তার খোঁজ খবর নেওয়া এবং ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
ধামইরহাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আজমল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মৌখিকভাবে অবগত করলে তাকে লিখিত ভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষিকা যদি ছুটি না দিয়ে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এ বিষয়ে এখনো তাকে জানানো হয়নি। তবে অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।