আর নয় কয়লাভিত্তিক জ্বালানি; নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাই কার্যক্রর নীতি ও বিনিয়োগ এই স্লোগানে ঝালকাঠিতে মানববন্ধন করেছে টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। রবিবার (৩১ অক্টোবর ২০২১) সকালে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রদত্ত অঙ্গীকার প্রতিপালনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতের দাবিতে ঝালকাঠি ডিসি অফিসের সামনের সড়কে অর্ধঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে আসন্ন কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সনাকের অবস্থান এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারিশপত্র মানববন্ধনে উপস্থাপন করা হয়। সনাক সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু'র সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক ও সনাকের ক্লাইমেট ফাইনেন্স গভর্ণেন্স বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম তালুকদার, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সদর উপজেলা সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস-ঝালকাঠির সমন্বয়ক তন্ময় চন্দ্র অভি, ইয়াস এর সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা।
ধারণাপত্র পাঠ করেন- ইয়েস দলনেতা রাফিউল ইসলাম ও সদস্য শাকিলা আক্তার। এসময় আসন্ন কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য মোট ১৪টি দাবি তুলে ধরেন সনাক সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু। দাবিগুলোর মধ্যে কপ-২৬ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ যেসব প্রস্তাব তুলে ধরতে পারে, সে বিষয়ে মোট আটটি দাবির কথা জানানো হয়।
সেগুলো হলো, জলবায়ুবিষয়ক নীতি নির্ধারণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে; ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইনটেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনসহ (আইএনডিসি) প্রশমনবিষয়ক সব কার্যক্রমে উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে; ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি উৎপাদনে উন্নত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) পক্ষ থেকে সমন্বিত দাবি তুলতে হবে।
আটটি দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল প্রদান করতে হবে; জিসিএফসহ জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা অনুদান হিসেবে দিতে হবে; দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় একটি আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে; ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রস্তুতে একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে এবং ঝুঁকি বিনিময়ে বিমার পরিবর্তে অনুদানভিত্তিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করে জিসিএফ থেকে যথাসময়ে ও দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প অনুমোদন দিতে হবে।কপ-২৬ সম্মেলন সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের কী করণীয়, সে বিষয়ে আরও ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
সেগুলো হলো, ২০২১ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার কয়লা জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিতে হবে; নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কপ-২৬ সম্মেলনে একটি আইনি সমঝোতা করতে সিভিএফের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে; জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত পরিবেশের প্রভাব নিরূপণ করে অগ্রসর হতে হবে।
একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যানে (আইইপিএমপি) কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে; জ্বালানি খাতের স্বার্থের দ্বন্দ সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত আইইপিএমপি প্রণয়ন করতে হবে; বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে; সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রশমন বিষয়ক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে; স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সনাক সহসভাপতি ছালেক আজাদ খান সোহাগ, সনাক সদস্য একেএম শামসুল আলম বেলাল, গৌতম বণিক, স্বজন সদস্য চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ; টিআইবির এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মিজানুর রহমানসহ সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24