ঝালকাঠির সৃগন্ধা বিশখালী নদীর মোহনায় দিয়কুল নামক স্থানে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী “অভিযান -১০” লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অনন্তÍ ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ রয়েছে আরো ২ শতাধিক। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের তথ্যমতে নিখোজ রয়েছে ৬০ জনের বেশী। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই দূর্ঘটনা ঘটে।যাত্রীরা জানান,যান্ত্রিক ক্রুিট নিয়েই ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেওশ্যে যাত্র শুরু করে ‘অভিযান’ লঞ্চ।
লঞ্চটি ঝালকাঠি সুগন্ধ নদীতে অতিক্রমকালে যাত্রীরা লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ শুনতে পান। এসময়ই লঞ্চের মধ্যে আগুন ধরে যায়। লঞ্চটি পারে আসে আসতেই অগ্নিদগ্ধ হন অনেকে। অনেকে নদীতে ঝাপ দেন। এসময় শিশূদের নিয়েও অনেকে নদীতে ঝাপ দেন। নদীতে লাফিয়ে পড়া অনেক যাত্রীকেও এখন খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। দূর্ঘটনার পর পর সকালে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় নৌমন্ত্রনালয়, বিআইডব্লিউটি ও জেলা প্রশাসনের মোট ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌ মন্ত্রনালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে ৫ দসস্যের তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।বিআরটিসির তথ্য অনুযায়ী এ অভিযান-১০ লঞ্চে ২৮০জন যাত্রী ও ২৫জন ষ্টাফ ছিল। তবে লঞ্চের যাত্রীরা দাবী করেছেন ৫-৬ শত যাত্রী ছিল লঞ্চে।
সন্ধ্যা ৬টায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ারসার্ভিসের উপ-পরিচালক ফরিদ উদ্দীন ভুইয়া। তিনি আরও জানান, আজ শনিবার সকালে পুনরায় উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রন আনেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৩৩ জন ও কোষ্টগার্ডের সদস্যরা ৬জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
এদের মধ্যে ৫জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়িতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কি কারনে এই দূর্ঘটনা ঘটলো ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা তা তাৎক্ষনিক জানাতে পারেনি। লঞ্চে প্রায় সকল যাত্রীই বরগুনা জেলার অধিবাসী। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ কমিটি রিপোর্ট প্রদান করবে। গতকাল দুপুরে ঝালকাঠি পৌরমিনি পার্কে গিয়ে দেখা যায় এখানে সারিবদ্ধভাবে উদ্ধারকৃত লাশগুলো রখা হয়েছে।
এখানে এসে স্বজনরা তাদের নিকট আত্বীয়দের লাশ সনাক্তের চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশ মরদেহই বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মাত্র ৬টি মরদেহ সনাক্ত করা গেছে। জেলা প্রশাসন র্সত্র জানিয়েছে বিকৃত হওয়া লাশগুলো ডিএনএ টেষ্ট করার পরে হস্তান্তর করা হবে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রতিটি নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।র্যাবের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন,বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান খান, বরিশাল রেঞ্চ ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেছন।
বরগুনার ডলুয়া গ্রামের মোল্লার হোরা গ্রামের সুমন জানান, তার পরিবারের সদস্যরা লঞ্চেকরে বেড়াতে আসতেছিল। পরিবারের ৭ জন লঞ্চে থাকলেও ৩ জন সাতার কেটে তীরে উঠতে পারে। নিখোঁজ রয়েছে তার স্ত্রী তাসলিমা(৩২), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মিম(১৫), সুমনা আক্তার তানিসা (১২) ও ছেলে জুনায়েদ ৭। বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের সপ্নীল নিখোজ রয়েছে বলে পরিবার সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
বিকেল ৩টার দিকে নৌ পরিবহন প্রতিপ্রন্থ্যী খালিদ হাসান চৌধূরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি এই ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষনা দেন মন্ত্রী। আহতদের সরকারীভাবে চিকিৎসা করা হবে।প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, দূর্ঘটনা কবলিত লঞ্চে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ইউএনও মুজাহিদুল ইসলামও ছিলেন। লঞ্চটিতে আগুন ধরে গেলে তিনি স্ত্রীসহ নদীতে লাফ দেন। এতে তার স্ত্রীর পা ভেঙ্গে যায়। তবে তারা সাতরিয়ে পারে উঠতে সক্ষম হন।
বরিশাল কোষ্টগার্ডের ষ্টেশন কর্মকর্তা ল্যা: আহমেদ অনাবিল জানান, খবর পেয়ে কোষ্টগার্ডের ৫টি টীমে মোট ২৮জন সদস্য ঘটনাস্থলে এসে ৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছে।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো: জোহর আলী জানান, উদ্ধার কাজ অব্যহত রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বরিশালের বিভাগীয় উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভুইয়া জানান, তারা বরিশাল থেকে টিম নিয়ে এখানে এসে উদ্ধার কাজ এবং আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রসান্ত কুমার দে বলেন, নিহতদের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের প্রায় সকলেই বরগুনার জেলার অধিবাসী। তারা হলো, বেতাগী উজেলার কাদিরাবাদ গ্রামের রিয়াজ (৩০), বরগুনার পরিরখালের রাজিয়া সুলতানা (৩৩), তার মেয়ে নুসরাত (৯), বরগুনার করইতলা গ্রামের রাজ্জাক (৩২), হোসনেয়ারা (৩২)। যাচাই বাচাই করে পরিবারের নিকট লাশ হস্থান্তর করা হচ্ছে।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক (সদর/সাকেল) জানান, ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যাত্রীদের উদ্ধারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। দগ্ধ যাত্রীদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. আমির হোসেন বলেন, ২০০ শতের বেশী যাত্রী আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের প্রাথমিক চিকি’সা শেষে বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24