ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতু। তার প্রতীক আনারস। এরইমধ্যে এলাকায় ভোটারদের মধ্যে চমক সৃষ্টি করেছেন এই এই প্রার্থী। প্রতিদিন শত শত মানুষ তার পক্ষে মিছিল করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন।
ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আরও নির্বাচন করছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নজরুল ইসলাম ছানা ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মাহবুবুর রহমান। আগামী ২৮ নভেম্বর উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের আগে পাড়া মহল্লা, হাট বাজারে এবং চায়ের দোকানে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। সে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকেন, বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে।
জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর ৫ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি আর পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানায় তার দলের গুরুমায়ের কাছেই বেড়ে ওঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। গুরুমায়ের পরের দ্বায়িত্বটা তিনি দেখভাল করেন। ঢাকায় থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসেন। তার কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। এ পর্যন্ত তার এলাকায় দুইটি মসজিদ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছেন অর্থ। এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্ত হয়ে তার কাছে গিয়ে কখনও খালি হাতে ফিরতে হয়নি। কয়েক বছর আগে গ্রামের বাড়ি দাদপুরে তার বাবার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কী তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে দাঁড় করিয়েছে। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করে। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। তাই যতদিন তোরা বেঁচে থাকবি আওয়ামী লীগের বাইরে যাবি না, নৌকায় ভোট দিবি। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। প্রয়াত বাবার কথায় নৌকায় ভোট দিলেও কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি। ভোটে জয়ী হলে জীবনের বাকিটা সময় নিজ গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর সেবা করে যাব। কথা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু আরও বলেন, আর দশজন স্বাভাবিক নারী পুরুষের মতো না হলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। আল্লাহ আমাকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। সবথেকে বেশি কষ্ট পাই যখন শুনি আমার এলাকার কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না অথবা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। এমন সংবাদ পেলেই আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়াতে।
এর আগে গত উপজেলা নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটচাঁদপুরে পিংকি খাতুন নামে এক হিজড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি দেশের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি পান।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।