মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘পথে পথে বিজয়’ শিরোনামে ঝিনাইদহে আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৮ নভেম্বর) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘পথে পথে বিজয়’ শিরোনামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরন সভার সভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন,ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা রণাঙ্গনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তাফা লোটন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মালিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মসির উদ্দিন, এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ।
প্রধান অতিথি আব্দুল হাই এমপি বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বছর ২০২১ সাল। এই গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ আনন্দক্ষণ উদযাপনের মাধ্যমে আমরা ফিরে যেতে চেয়েছি,আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়। যদিও বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন করেছিল, কিন্তু ঝিনাইদহসহ দেশের অনেক অঞ্চলে বিজয় এসেছিল ১৬ ডিসেম্বরের আগেই। হয়েছিল শত্রুমুক্ত।
৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার ও এদেশে তাদের দোসরদের হটিয়ে ঝিনাইদহকে আমরা শত্রুমুক্ত করি। সেদিন ঝিনাইদহের মুক্তিকামী দামাল ছেলেরাও এ থেকে পিছিয়ে ছিল না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশে প্রথম যে সম্মুখ সমর হয় তা সংঘটিত হয়েছিল ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে ২ এপ্রিল সদর উপজেলার বিষয়খালী যুদ্ধ, ৪ এপ্রিল শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগস্ট একই উপজেলার আলফাপুর যুদ্ধ, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধ ও ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধ।
এছাড়াও ৬ আগস্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ই নভেম্বর জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকহানাদাররা যশোর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৩ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ও ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরসহ অনান্য এলাকা। এ যুদ্ধে সারা জেলায় ২৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তিনি বলেন,আমাদের জেলাতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে মাত্র দুজন। তারা হলেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন বিজয় শুধু আনন্দ নিয়েই আসে না, স্বজন হারানোর বেদনাও নিয়ে আসে। তবে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার দাবি তাদের।
আব্দুল হাই এমপি বলেন, ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ঘর থেকে দলে দলে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে উল্লাস করতে থাকে। ফুল দিয়ে তারা মুক্তিসেনাদের বরণ করে নেয়। ঝিনাইদহবাসীর কাছে দিনটি চির স্মরণীয়।
‘পথে পথে বিজয়’ শিরোনামে আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরন সভায় একাত্তরে আনুষ্ঠানিক বিজয়ের আগে দেশের যেসব এলাকা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে তেমন ২১টি এলাকায় সমাবেশের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাগন অংশ নেন।“বিজয়ের গল্পগুলো পুনরায় বলা, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে পুনরায় জানা এবং সম্মান প্রদর্শন করা, যুদ্ধের অসাধারণ গল্পগুলো উপভোগ করা, তরুণদের যুদ্ধের ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, সবাইকে এই বিজয় দিবসের বিশালতা উপলব্ধি করা, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঝিনাইদহ জেলাসহ দেশব্যাপী উদযাপন করা।”অনুষ্ঠানে ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন এলইডি স্ক্রিনে প্রামান্যচিত্র,পঞ্চাশ বৎসরের থিম সং প্রোগ্রাম থিম,জাতীয় সংগীত,আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে অনুষ্ঠানের সমাপণী ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য আগামী ৬ ডিসেম্বর যশোরে আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে তারই অংশ হিসেবে এই অবহিত করণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।