আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ট্রেনে নাশকতা কিংবা সহিংসতার কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার কোন তথ্য আপাতত আমাদের কাছে নেই।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার তথ্য যদি থাকে কিংবা আশঙ্কা থাকে তা যেন আমরা যথাসময়ে জানতে পারি সে বিষয়ে আমাদের মেকানিজমও কাজ করছে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ, র্যাব সদরদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও র্যাব-৩ এর অন্যান্য অফিসারগন এসময় উপস্হিত ছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন নিশ্চিত হয় সেজন্য বেশ কিছু কার্যক্রম নিয়েছি। স্টেশনভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও এখানে আছেন। বিভিন্ন স্টেশনে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য নিয়োজিত করেছি।
রেলস্টেশন গুলোতে র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডও নজরদারি করছি। আমরা বসে নেই, প্রস্তুত আছি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে র্যাব সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
ঈদে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদে নাড়ির টানে ঢাকাবাসীর অনেকেই বাড়ি চলে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে সেই শূন্য ঢাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ওপর বর্তায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের মোটরসাইকেল পেট্রোলের সংখ্যা অনেকটাই আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
র্যাবের মূখপাত্র বলেন, এছাড়া যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি, যাতে কোথাও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে আমরা যেন সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পাই।
কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় র্যাব-৩ সার্বক্ষণিক বেশ কিছুদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি দালাল বা টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু আমরা দেখেছি তারা কেউই প্রকাশ্যে নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছি। যারা দুষ্কৃতকারী এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে জড়িত ছিল, যারা এই টিকিটকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার টিকিট কালোবাজারির পরিকল্পনা করছিল, আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দেইনি। যাত্রীদের অনুরোধ করবো আপনার প্রতারিত হবেন না। নিয়ম মেনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করে নিরাপদ যাত্রা উপভোগ করুন।
টিকিট কালোবাজারি চক্র সিন্ডিকেটকে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা যদি একজন দালালকেও পাই, যার কারণে রেলের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দুষ্কৃতকারী, যারা এই ঈদকে ঘিরে হাজার হাজার টিকিট কালোবাজারির পরিকল্পনা করছিল তাদের মূলহোতাসহ প্রায় শতাধিকজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আমরা কিন্তু কাউকে ছাড় দিইনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ট্রেনে চলাচল করুন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা ছিল— এবার যেন সম্মানিত যাত্রীগণ নির্বিঘ্নে, সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। সে লক্ষ্যে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য র্যাব বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যারাই অপকর্মে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
দেশের বড় বড় স্টেশনগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাবের সকল ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। রেলওয়ে কর্তৃক ভালো সিদ্ধান্ত অ্যাপসে শতভাগ টিকিট বিক্রি। তবে, এটার সুযোগও নেয় একশ্রেণির অসাধু চক্র। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা সন্তুষ্ট। এজন্য ধন্যবাদ পেতে পারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও। তারা বেশ সতর্ক ছিল।
যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিভিন্ন বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। র্যাবের সদস্যরাও কাজ করছেন। যদি সহযোগিতা করেন তাহলে আপনার লাভ, আমার, দেশের লাভ, সবার লাভ। ঝুঁকি নিয়ে গমন করবেন না, সময় নিন। কিন্তু যাত্রা নিরাপদ করুন। আপনাদের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে রেলওয়েসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, ঈদ ঘিরে আমাদের বিভিন্ন রেল স্টেশনে গোয়েন্দা কার্যক্রমসহ চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন এজন্য একজন দালালকেও পাই তাহলে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।
ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের এ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য র্যাব নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, গোয়েন্দারা কাজ করছে, সাইবার জগতেও রয়েছে নজরদারি। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা ও বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত তথ্য হচ্ছে— এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা বসে নেই, প্রস্তুত আছি। যাতে করে ঈদে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা যায়।
সূত্র : একুশে টেলিভিশন
এফআর/অননিউজ