ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হলো। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর নড়াইলবাসী ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ পেলে। মঙ্গলবার
সকালে নড়াইল ষ্টেশন জুড়ে ছিলো উৎসুক মানুষের ভীড়। আর নড়াইল হতে প্রথমে ট্রেনে ওঠার সুযোগ পেয়ে ভীষণ খুশি যাত্রীরা। ৪৯তম জেলা হিসেবে রেলের
আওতাভূক্ত হলো এই জেলা।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটের সময় প্রথম ট্রেনটি নড়াইল স্টেশনে পৌঁছায়। ৪মিনিট যাত্রা বিরতির পর সকাল ৭টা ৪২ মিনিটের সময় ঢাকার
উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে খুশি হয়েছেন বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণীপেশার যাত্রীরা। এর আগে খুলনা থেকে সকাল ৬টা ৪ মিনিটের দিকে
ট্রেনটি ছাড়ে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে নড়াইল ষ্টেশনে পৌছানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন ষ্টেশনে একটু বেশি দেরী করায় কিছুটা বিলম্ব হয়।

ট্রেনটি ষ্টেশনে পৌছানোর পর উপস্থিত উৎসুক জনতা হাত নেড়ে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। যাত্রীরাও হাত নেড়ে উৎসুব জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। নড়াইল স্টেশন সুত্রে জানাগেছে, নড়াইল হতে ঢাকার জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। উদ্বোধনী যাত্রায় ৫০ জন যাত্রীই ট্রেনে ঢাকায় গিয়েছে। টিকিট ছাড়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। নড়াইল হতে ঢাকায় ৫০টি সিট বরাদ্দ রয়েছে। অন্যান্য ষ্টেশনের জন্য বিভিন্ন ষ্টেশনের জন্য কম বেশি সিট বরাদ্দ রয়েছে।

এদিকে নড়াইল হতে ঢাকায় যেতে পেরে ভীষণ খুশি যাত্রীরা। কালের সাক্ষী হতে পেরে তাদের মধ্যে ছিলো অন্যরকম অনুভূমি। ট্রেন যাত্রী জানানারা বেগম বলেন, ‘ আমি
প্রথম যাত্রায় ঢাকার টিকিট পেয়ে ভীষণ খুশি। হয়েছি। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পেরে ভীষণ খুশি। নড়াইল জেলা এক সময় অবহেলিত থাকলেও এখন আমরা
যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেলাম।

প্রথম দিনে যাত্রী হতে পেরে খুশি এহসানুল হক । তিনি বলেন, ‘ এক সময়ে নড়াইল হতে বাসে ঢাকায় যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগতো। পদ্মা সেতু ও নড়াইলের
মধুমতি সেতু হওয়ার পর ৩/৪ ঘন্টায় ঢাকা যাওয়া যায়। এখন ট্রেন চালু হওয়ার কারনে আমরা ২ ঘন্টায় ঢাকা যেতে পারবো। আজকে প্রথম যাত্রী হতে পেরে ভীষণ
খুশি লাগছে। নড়াইল জেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো।’ এদিকে টিকিট না পেয়ে এক যাত্রী ট্রেনে উঠে ঢাকায় গিয়েছে। ট্রেনে ওঠার
আগে তিনি বলেন‘ আমি বিনা টিকিটে ঢাকায় যাচ্ছি। এজন্য জরিমানা দিতে হবে। তাও আমি ঢাকায় যাচ্ছি। কারণ প্রথম যাত্রার অনুভূতি বোঝাতে পারবো না। তাই জরিমানা দিয়েই ঢাকায় যাচ্ছি।’

এদিকে ভোর সকাল থেকেই ট্রেন দেখার অপেক্ষায় শত শত মানুষ ষ্টেশনে ভীড় করে। শহরের ভওয়াখালী এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে কল্পনাও করতে পারিনি। আজ ট্রেন চলাচল করবে শুনে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এসেছি। আমার মত শত শত মানুষ ষ্টেশনে এসেছে। সবার মাঝে
অন্যরকম একটা আনন্দ বিরাজ করছে। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন আসার পর কেমন লাগছিলো সে অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবো না। ইচ্ছা হচ্ছিলো ঢাকায়
চলে যাই।’

গণমাধ্যমকর্মী আসাদ রহমান, ফরহাদ খান, শরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা ভোর
সকালে েেষ্টশনে অএসেছি। পেশাগত জীবনে অনেক নিউজ আমরা কাভার করেছি।

তবে আজকের নিউজটা কাভার করতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি। আমরা নড়াইলবাসী এগিয়ে যাচ্ছি। এক সময়ের অবহেলিত জেলা নড়াইল ট্রেন যোগাযোগের আওতায়
আসায় ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে আর্থিকসহ সামগ্রিকভাবে নড়াইল জেলা উন্নয়নের সেতুবন্ধনে যুক্ত হলো।

নড়াইল জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার বলেন, ‘ আমরা এক মহেন্দ্রক্ষণে নড়াইল রেলষ্টেশনে অবস্থান করছি। নড়াইল জেলা
এগিয়ে চলেছে। আরো এগিয়ে যাবে। বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীণ সরকার আন্তরিকতার সাথে নড়াইলের ওপর দিয়ে ট্রেন চালু করায় আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি
এভাবে নড়াইল জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে।

নড়াইল রেল ষ্টেশন মাষ্টার উজ্জ্বল বিশ^াস বলেন,‘ নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে আজ থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। এই ষ্টেশনের প্রথম মাষ্টার হতে পেরে আমি গর্বিত।
নড়াইল হতে ঢাকায় স্টেশনের জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। টিকিট চালু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে দাড়িয়ে ঢাকায় গিয়েছে। প্রথম দিকে
অনেক চাহিদা থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রীরা টিকিট পায়নি। আশা করা যায় আগামীতে সমস্যা থাকবে না।

ট্রেন ছাড়ার সময়সুচি সম্পর্কে বলেন, খুলনা ও বেনাপোল হতে প্রতিদিন ২টি ট্রেন ঢাকা যাবে এবং পুনরায় ফিরে আসবে। প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি নড়াইলে পৌছাবে সকাল সোয়া ৭টায় এবং ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের সময়। ঢাকা থেকে সকাল ১০.৪৫ মিনিটের সময় ছেড়ে আসা ট্রেনটি নড়াইলে পৌঁছাবে দুপুর ১২ টা ৪৬ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌছাবে বেলা ২টা ২৫ মিনিটের দিকে। বেনাপোল থেকে ওই ট্রেনটি কিছুটা যাত্রা বিরতি করে বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটের সময় ছেড়ে নড়াইল পৌছাবে বিকাল ৪টা ৪৬ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টায়। রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি নড়াইল পৌছাবে ১০টা ৬ মিনিটে
এবং খুলনায় পৌছাবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে।