কুমিল্লার মুরাদনগরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাত সন্দেহে জোড়া খুনের ঘটনায় ৫১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বুধবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
‘ডাকাত’ সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গত ১৬ জানুয়ারী সোমবার কুমিল্লার আদালতে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে প্রথম মামলা করেন, কাজিয়াতল গ্রামের নিহত নূরে আলমের বাবা আবদুস ছালাম। পরে একই ঘটনায় নিহত পালাসুতা গ্রামের নিহত ইসমাইল হোসেনের ছোট ভাই লিটন সিকদার বাদী হয়ে গত ১৭ জানুয়ারী মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার আদালতে আরো ২৭ জনকে আসামী করে আরেকটি মামলা করেন।
বন্ধুকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ডাকাত গুজবের শিকার হয়ে পিটুনিতে নিহত কাজিয়াতল গ্রামের নূরে আলম হত্যার বিচারের দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে মুরাদনগর। বুধবার সকালে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া মহল্লায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বেশ কিছু জায়গায় সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ করেন ডাকাত গুজব বিরোধীরা।
কাজিয়াতল হাই স্কুল মাঠ ও সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন কয়েক হাজার এলাকাবাসী। সকাল ৮টায় শুরু হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা নূরে আলম হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক দ্রæত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায়। পরে ডাকাত গুজবকারীদের বিরুদ্ধে নানা ¯েøগান দিয়ে কাজিয়াতল- দারোরা, কাজিয়াতল- সিদ্বেশ্বরী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নিহত নুরে আলমের বাবা আবদুস ছালাম, ঠিকাদার আবু তাহের, হাবিবুর রহমান মেম্বার, সাবেক মেম্বার রুক্কু মিয়া, হাজী আবদুল খালেক, ব্যবসায়ী আল আমীন, শরিফ মিয়া, মনু মিয়া বেপারী, কামরুল হাছান, কাজী হুমায়ুন ও কলেজ ছাত্র ইকবাল হোসেন প্রমূখ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১১টায় পালাসুতা গ্রামের নায়েব আলী ওরফে নাবু মিয়ার ঘর থেকে তাঁর মেয়ের জামাই ও দুই বন্ধুকে ধরে নিয়ে পিটুনি দেয় একটি চক্র। ঘটনাস্থলেই নূরে আলম (৩৫) ও ইসমাইল হোসেন (২৮) মারা যায়। এ ঘটনায় অপর আহত শাহজাহান মিয়া এখনো কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন।
তদন্তের সাথে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পিবিআই ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যে কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানের উপস্থিতিতে গণশুনানীসহ একাধিক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
বুধবার বিকেলে মুরাদনগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কাজিয়াতল গ্রামের আবদুস ছালাম বাদী হয়ে আদালতে দায়ের করা মামলাটি মঙ্গলবার রাতেই এফআইআর করা হয়েছে। এ মামলায় ২৪ জনকে আসামী করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, উক্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।