জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও এখনও প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়নি।যাছাই বাছাই হয়নি,মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়নি, এমনকি প্রতীক বরাদ্দ ও হয়নি, অথচ প্রতিক বরাদ্বের আগেই কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি কে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তার নির্বাচনি এলাকায় পোস্টারিং করে সয়লাব করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ এলাকাসহ নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় এসব পোস্টারে সয়লাব হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পড় গত মঙ্গলবার থেকে নির্বাচনি এলাকায় এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো.জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম- ৪ আসনের (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার) সংসদ সদস্য। তিনি রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এদিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের আগেই এভাবে দলীয় প্রতীক সম্বলিত পোস্টায় লাগিয়ে দলকে বিব্রত করার শামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর দলীয় নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, এটা নির্বাচনি আচরণ বিধিরও লঙ্ঘন। তবে এসব পোস্টার প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমন্ত্রীর নাম ও ছবি সহ রঙিন পোস্টার লাগানো হয়েছে। এসব পোস্টারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি রয়েছে। কিছু পোস্টারে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবিও দেখা গেছে।
রঙিন এসব পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘অনেক অর্জন আমাদের, বাকি আরো অনেক কাজ। ব্রহ্মপুত্র সেতু ও রেল লাইনের জন্য মো. জাকির হোসেন (এমপি) কে নৌকায় ভোট দিন’। কিছু পোস্টারে ‘প্রচারে- কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সর্বস্তরের উন্নয়ন প্রত্যাশী জনগণ’ লেখা থাকলেও আরেক ধরণের পোস্টারে প্রচারকারীর নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ আমরা যারা দল করি এবং মনোনয়ন প্রত্যাশা করি তারা মনোনয়ন পাওয়ার আগে নৌকায় ভোট চাই। কিন্তু নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা ও দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই প্রাথী হিসেবে নিজের নামে দলীয় প্রতীকে ভোট চাওয়া দলকে ও ভোটারদের বিব্রত করার শামিল। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হয়ে তিনি দলীয় সভানেত্রীর অনুমোদনের আগেই কীভাবে এমন পোস্টারিং করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তাছাড়া এটা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন।’
একই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রহিমুজ্জামান সুমন বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন ও নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগেই এভাবে নিজের নামে দলীয় প্রতীক দিয়ে ভোট চাওয়া নির্বাচনি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দলীয় সভানেত্রী এখনও কাউকেই মনোনয়ন দেননি। তার আগেই নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার করা সভানেত্রীকে অবমাননার শামিল।’ একই মন্তব্য করেন ওই আসনে আরেক মনেনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর আলম।
এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মন্জুর সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, কেবল মাত্র তফসিল ঘোষণা হয়েছে। প্রধান মন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই নৈকার প্রার্থী হয়ে প্রচারনা করবেন। কিন্তু এখন প্রতি মন্ত্রীর এ কাজ করা ঠিক হয়নি
প্রতিক বরাদ্বের আগে পোস্টারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘ কেউ এরকম করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা নির্বাচন কমিশনার জিলহাজ উদ্দিন বলেন, প্রতিক বরাদ্বের আগে কোন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারনা করতে পারে না। এ ব্যাপারে প্রতি মন্ত্রী সহ সব প্রার্থীকে চিঠি দেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে শুক্রবার দুপুর ১২ টা ১৬ মিনিটে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গিয়েছে, তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এফআর/অননিউজ