‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি সজীব ওয়াজেদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সিগনেচার অনুষ্ঠান ‘লেটস টক’। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ১০টায় কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের পর্দায় শুরু হয় ‘লেটস টক’র ৫১তম আয়োজন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা উপায় যেমন জানতে চেয়েছেন তরুণরা, তেমনই আওয়ামী লীগ দেশকে কীভাবে পরিচালিত করবে- সেই প্রশ্নও রাখা হয় সিআরআই চেয়ারপারসন জয়ের কাছে।
বিভিন্ন খাতের অগ্রগামী দুই শতাধিক তরুণ এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ, চাকরির বাজারের হালহকিকত, মৌলবাদীদের হুমকি- এমন নানা প্রসঙ্গে জানতে চান বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রের মুখে।
এবার ২০৪১ রূপকল্পে তরুণদের জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিশন নিয়ে আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে সজীব ওয়াজেকে নানা রকম প্রশ্ন করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণরা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পার্থক্য কী? তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কি ভূমিকা রাখবে ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ? স্মার্ট বাংলাদেশ থেকে কি পাবে তরুণরা? শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভিতে সম্প্রচার হওয়া লেটস টক অনুষ্ঠানে সিআরআই চেয়ারপার্সন সজীব ওয়াজেদ এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
এ সময় তিনি বলেন, এখন আমরা ডিজিটালাইজড করা নিয়ে চিন্তা করছি না। বরং ভাবছি কোন কোন ক্ষেত্রকে আমরা পরিবর্তন করবো, আরও আপগ্রেড করবো। যেমন আমরা টার্গেট করেছি এআই এক্সপার্টিজ তৈরির। আমরা এআই তৈরি করবো, যা নিজেদের কাজে ব্যবহার করবো। সেটা সরকারি কাজে কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, যখন শুরু করি, বাংলাদেশে ডিজিটাল বলতে কিছুই ছিলো না। ইন্টারনেটই ছিলো না। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ছিলো না। সরকারি কোন কিছুই ডিজিটাল ছিলো না। ডিজিটালের টার্গেট ছিলো, প্রথমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানাতে হবে। সেটা আমরা করে ফেলেছি। এখন সবার হাতেই দেশ জুড়ে ফোরজি ইন্টারনেট আছে। প্রতিটি ইউনিয়নে এখন ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। এখানে আপনাদের সবার হাতেই স্মার্ট ফোন রয়েছে। ডিজিটাল হয়ে গেছে। এরপর আমাদের পরবর্তী ধাপে যাবার পালা।
এখন গবেষণার সময় জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এআই বা মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করবো। আগে ইলেক্ট্রনিক্স যেগুলো বাংলাদেশ আমদানি করতো, যা চায়না এখন এক্সপোর্ট করছে- যেমন মাদারবোর্ড, স্মার্ট ফোন বা এ জাতীয় পণ্যগুলো বাংলাদেশ রফতানি করবে। এটাই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ।
বিদেশ থেকে টেকনোলজি পণ্য আমদানি করার বদলে নিজেদের দেশি তৈরি, মাইক্রোপ্রসেসর সহ সম্পূর্ণ ভ্যালু চেইন তৈরি বিদেশ থেকে টেকনোলজি পণ্য আমদানি করার বদলে নিজেদের দেশি তৈরি করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনাকে বুঝতে হবে, টেকনোলজি একটি টুলস। ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন আমরা শুরু করি, সরকারি যত প্রক্রিয়া ডিজিটাইজড করা হয়েছে সে কাজটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোই করেছে। তখন থেকেই আমরা চেষ্টা করছি, কম্পিউটার-মোবাইল কিভাবে বাংলাদেশ স্বল্প খরচে তৈরি করা যায়। এখন ওয়ালটনের মত কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পণ্য উৎপাদন করছে। স্যামসাং এর মতো কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রোডাক্ট অ্যাসাম্বল করছে। আমরা কিন্তু স্টেপ বাই স্টেপ আগাচ্ছি। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে আরেকটি লক্ষ্য রেখেছি যে মাইক্রোপ্রোসেসর ডিজাইনে আমরা যাবো। এর অর্থ হলো আরেকটি ভ্যালু চেইন বাংলাদেশেই বানাতে পারবো। কিন্তু সেটা অনেক কঠিন। চায়নাও কিন্তু চেষ্টা করে কেবল সেই পর্যায়ে যাচ্ছে, পৌছায়নি। আমরা বিশ্বাস করি এখন চেষ্টা করে এখনই করে ফেলবো তা নয়, কিন্তু এখন থেকে অন্ততপক্ষে চেষ্টাটা শুরু করলে হয়তো ২০ বছর পর আমরা মাইক্রো প্রসেসর তৈরি করতে পারবো। এটা আমাদের শুরু করতে হবে এবং এটা আমরা শুরু করেছি।
এ সময় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এআই কিন্তু এখনো সেই স্টেজে যায়নি, যেই স্টেজে গেলে তা দুনিয়া দখল করে ফেলবে। একেবারেই শেখার একটা পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞদের থেকেই এআই নিয়ে আমার মতামত একটু ভিন্ন। আমি মনে করি এআই শুধুমাত্র একটি টুলস। এটি আমাদের চাকরি, কাজ-কর্ম সব দখল করে নেবে এমন নয়। এটা আমাদের নিজেদের জীবনে, নিজেদের টেকনোলজিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত একটি টুল। এখন সোশ্যাল পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে বা কৃষি বিষয়ে জানতে ও অ্যানালাইসিস করতে এই টুলস টি আমাদের সাহায্য করে। তাই বর্তমানে আমি এআইকে মনে করি একটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় টুলস হিসেবে। আর এ কারণেই স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা ৪টি বিষয়কে টার্গেট করেছি। তার মধ্যে একটি সেক্টর হলো এআই। বাংলাদেশ এআই-তে এক্সপার্টিজ ডেভলোপ করবে। এটা একটা লক্ষ্য।
আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পার্টনারশিপ করা হয়েছে জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, শেখ কামাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট বানানো হয়েছে দেশ জুড়ে গবেষণার জন্যই। গবেষণাকে কেন্দ্র করেই মূলত আমি আইসিটি বিষয়ক পরিকল্পনা করেছি। ভবিষ্যতে যেনে আমরাই আইসিটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে পারি এবং টেকনোলজিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে। সেটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হোক বা কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমি যেটাকে গুরুত্ব দিয়েছি বিশেষত আইসিটি সেক্টরে। সেই লেভেলে পৌছাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এমআইটি বলেন বা হার্ভার্ড বলেন। তারা এত ভালো করেছে দুর্দান্ত সব গবেষণা কার্যক্রমের কারণে। আমাদেরও গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে, ফান্ডিং বাড়াতে হবে। এমনটা করতে থাকলে নিশ্চয়ই একদিন আমাদের দেশেও হার্ভার্ডের মত একটি বিশ্ববিদ্যালয় একদিন গড়ে উঠবে।
দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়াং বাংলা ‘লেটস টক’ শিরোনামে এ আয়োজন করছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও আয়োজন করা হয় লেটস টক যেখানে দেশ নিয়ে তরুণদের ভাবনার কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তরুণদের নিয়ে তার ভাবনার কথাও জানান এই অনুষ্ঠানে।
সূত্র: একুশে টিভি
আরএইচ/অননিউজ