কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় দ্রুত স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য কেন্দ্রটিতে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এখানে কর্মরত জনবল অন্য কেন্দ্রে বদলি করতে বলা হয়েছে।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান রোববার বেলা ১১টার সময় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিজেলে চলা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দুটি ইউনিট বন্ধ করা হয় প্রায় দুই বছর আগে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা হয়েছে অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বাকি একটি ইউনিট সচল রাখা ছিলো। অথচ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণে গত দুই বছরে সরকারের খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরে গড়ে ব্যয় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, তিন নম্বর ইউনিটটি দ্রুত বন্ধের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। আমি নিজেও ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। বর্তমানে ৭৫ জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের বদলি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতদ্রæত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রের জনবল অন্যত্র বদলি করতে ও মেশিনটি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ, অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এক নম্বর ইউনিট ও দুই নম্বর ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন নম্বর ইউনিট থেকে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা হলেও মেশিনটি সচল রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এটি বন্ধ করে অকশন দিয়ে জায়গাটি ক্লিয়ার করতে হবে। এখানে ৮ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল (সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং অন্যান্য ব্যয় হিসাবে প্রতিবছরই কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের। হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৮ কোটি, ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। একই বছর ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট। ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৪৬ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২২ সালে। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি সচল আছে ৪৪ বছর ধরে।
২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সক্ষমতা কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোর তালিকায় পড়ে ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ ও ব্যয়বহুল দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় সরকার।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরো জানান, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জরাজীর্ণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় ৩ নং ইউনিট বন্ধ করে দেয়। আগে ২৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চালানো হতো কেন্দ্রটি। তবে দুই ইউনিট বন্ধ হওয়ার পর ৭০ জনকে রেখে ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। ৩ নম্বর ইউনিটের যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা খরচ হত। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভেতরে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২০২২ সালে জরিপ চালিয়েছে। তবে পরে আর গতি পায়নি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ১৯৩৪তম বোর্ড সভায় ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরেই নতুন আরেকটি ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় ২০২২ সালের ৭ জুন। পিজিসিবি এবং পেট্রোবাংলার সমন্বয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছর ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এফআর/অননিউজ