কুমিল্লার তিতাসে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন।তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। রমজান মাস এলেই বেড়ে যায় নিত্য পণ্যের মূল্য। অন্যান্য রমজান মাসের মতো এবারের রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জানা যায়, সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে গরুর মাংসসহ ২৯ নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিলেও তা তোয়াক্কাই করছেন না তিতাসের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। ওই অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে নিম্ন আয়ের মানুষকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বাতাকান্দি বাজার, মাছিমপুর বাজার, আসমানিয়া বাজার, কলাকান্দি বাজার, কড়িকান্দি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম কমলেও ডিম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অনেক।
অন্যান্য হাট বাজারের তুলনায় বাতাকান্দি বাজারে দফায় দফায় বেড়েছে সব ধরণের ফলমূলসহ মাছের ও সবজির দাম। এই বাজার ঘুরে দেখা যায়, উন্নত মানের প্রতি কেজি খেজুর (একটু ভালো)- ৫২০ , সাধারণ খেজুর-২০০, আপেল-২৫০, কমলা-২৪০, মালটা-৩২০, আনার-৩৫০, কালো আঙুর-৩৫০, সাদা আঙুর-২৬০, পেয়ারা-৭০, বড়ুই-১০০ টাকা, প্রতি পিস তরমুজ- ৪৫০ থেকে ৭০০ শত, বাঙ্গি-৩০০, চিমরা(বাঙ্গি)-২৫০, সাগর কলা এক কুড়ি-২২০, চম্পা কলা এক কুড়ি-১৫০,
প্রতি হালি আনারস-৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সবজির বাজারের গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি শসা-৪০, ক্ষিরা-৫০, আলু ৪০, টেমেটো-৪০, সিম-৪০, চিচিঙ্গা-৪০, ঢেঁড়স-৮০, গোল বেগুন-৫০, লম্বা বেগুন-৩০, মুলা-৩০, করলা-৬০, ওইচ্ছে- ৭০, কচুর লতি-৭০, কাঁচা পেঁপে-৩০, গাঁজর-৪০, কাঁচা মরিচ-৮০ টাকা, প্রতি পিস ছোট জালি কুমড়া-৫০, ছোট মিষ্টি কুমড়া-৫০, লাউ-৩০, বাঁধা কপি-৩০, ফুল কপি-৩০,এলাচি লেবুর হালি-৮০,লম্বা লেবুর হালি-৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়,প্রতি কেজি চিংড়ি মাছ-১৫০০, শিং -১০০০,বোয়াল-১২০০,আইর -১২০০, কৈ -৮০০, টেংরা -৮০০, জাটকা ইলিশ-৬০০, রুই -৪০০, তেলাপিয়া-২২০, পাঙ্গাস -২২০, মিরকা -৩২০, কাতল -৫৫০, কার্ফু-৪০০, ব্রিকেট -৪০০, গ্লাসকাপ-৩৫০,পাবদা-৪০০,বাটা মাছ-২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০, খাসির মাংস-১০০০, ব্রয়লার মুরগী-৩০০, সাদা ফার্ম-২০৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে চিনি ১৪০, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার-১৬০, প্রতি কেজি ছোলা বুট-১১০,ডাবলী বুট-৮০, মশুর ডাল (কেঙ্গারু)-১৪০, মোটা মশুর ডাল-১১০, খেসারীর ডাল-১৩০, বুটের ডাল-৮০, মাশকলাই ডাল-১৪০,মুগ ডাল-১৬০,ভেষণ-১০০, পেঁয়াজ-৬০, দেশী রসুন-১৪০, চায়না রসুন-২০০, আদা-২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি হালি ফার্মের মুরগীর ডিম-৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, দেশী মুরগীর ডিম হালি -৮০, হাঁসের ডিম হালি-৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম কমলেও অন্যান্য পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে বলে জানা গেছে। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একারণে বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি খুব বেশি নেই বললেই চলে।
এবিষয়ে বাতাকান্দি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো.কামাল মিয়া, সাইফুল ইসলাম ও টুটুলের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান- গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেকটা কমেছে সবজির দাম। আমরা কমের মধ্যেই সবজি বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতাদের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।মাছ ব্যবসায়ী লক্ষণ বলেন, আমরা কম দামে কীভাবে মাছ বিক্রি করবো? আড়ৎ থেকেই বেশি দামে মাছ কিনে আনতে হয়। সীমিত লাভে মাছ বিক্রি করি, মাছ ব্যবসা করে আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়।এটা ছাড়া আর অন্য কোন কাজ পারি না, তাই বাধ্য হয়ে মাছের ব্যবসা করে কোন রকম সংসার চালাতে হচ্ছে।
এব্যাপারে বাতাকান্দি বাজারের মাংস ব্যাবসায়ী মো. ফিরোজ মিয়া জানান,আমাদের পল্লী এলাকার মধ্য একটা গরু জবাই করে বিক্রি করা পর্যন্ত দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় ৪-৫ হাজার টাকা। অথচ গরু ক্রয় করা অবস্থায় আমাদের হাতে ৩০ হাজার টাকা মন পড়ে যায়। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম পড়ে ৭৫০ টাকা। ৫০ টাকা লাভ করে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করতে হয় ৮ শত টাকায়। এরকম দামে বিক্রি করলে আমাদের চালান থাকবে না।
তরমুজ ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে তরমুজের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশাল থেকেই বেশি দাম দিয়ে তরমুজ কিনে আনতে হয়। তাই প্রতি পিস তরমুজ- সাইজ ভেদে ৪০০, ৫০০, ৬০০ ও ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এর কমে তরমুজ বিক্রি করা সম্ভব না।জানা গেছে তিতাসে রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার এবং সোমবার উপজেলার বাতাকান্দি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দুই দফা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর- রহমান।
এফআর/অননিউজ