পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরে এক নারীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে রবিউল ইসলাম রুবেল নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে বহিস্কার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। একই সাথে তার অপর সহযোগী মাদ্রাসা শিক্ষককেও বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রধান অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রুবেল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের পুর্ব বামনপাড়া (সেন্টার নামক) এলাকার আব্দুল গফ্ফারের ছেলে। সে একসময় জামাতে ইসলাম ছাত্র শিবিরের সদস্য থাকলেও বর্তমানে সে বাংলাদেশ ইসলামিক আন্দোলন তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর শাখার উন্নতম সদস্য।
অভিযোগ আছে, উপজেলার ভজনপুর এলাকার হাফেজীয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত অবস্থায় রুবেল মাদ্রাসার এক শিশুকে বলাৎকার করে। এর পর তাকে এ ঘটনায় মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়। এর পর পঞ্চগড়ে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার জন্য আশ্রয় নিয়ে জালাশি এলাকায় এক নারী দেহ ব্যাবসায়ীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জনতার হাতে আটক হয়ে গণ ধোলাই খেয়ে কোনো মতে মুক্তি পায়। এর পর একেক নারীর সাথে লুচ্চামি আচরন ব্যবহার করতে থাকে সে। পরে কৌশলে রুবেল পঞ্চগড় শহরের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ঐ মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় স্থানিয়রা তাকে আটক করে বিয়ের পিড়িতে বসিয়েদেয়, কিন্তু লম্পট রুবেল বিয়ের পিড়িতে বসেও প্রতারণার সুযোগ নিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) প্রদর্শন করলে কাজী বিয়ে ফেলে চলেয়ায়। পরে তাকে মুন্সি মোহর দিয়ে বিয়ে দেন স্থানিয়রা। এর পর সে ভজনপুর ইউনিয়নের বগুলা হাটি চারপারা নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করলে গত ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল আবারো এক ছাত্রকে অমানবিক শিশু নির্যাতন চালিয়ে সময়িক বহিস্কার হয়। এর দুই মাস পর ঐ মাদ্রাসায় আবারো যোগদান করলে ৬ মাস যেতে না যেতে একই মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলৎকার করে সে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কৃত হয়। সর্বশেষ ভজনপুর এলাকায় এক নারীকে মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার উত্যক্ত করে।
আরো জানা গেছে, রুবেল যেখানে যেখানে মসজিদ ও মাদ্রাসায় চাকুরি নিয়েছে সেই এলাকায় নারী কেলেংকারী করে এলাকা ছাড়া হয়েছে। সবশেষ সে ভুয়া ডিগ্রী ধারী পরিচয় দিয়ে ভজনপুর এলাকায় দুটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় কর্মরত ছিলেন। গত ১০ নভেম্বর (বুধবার) এক নারীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে ভজনপুর এলাকার মাদ্রাসা থেকে তাকে স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করার পর অপর আরেকটি মাদ্রাসা থেকে শনিবার (১৩ নভেম্বর) তাকে বহিস্কার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ উঠার পর থেকে সে এলাকা থেকে পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, একজন ছাত্র মাদ্রাসায় আলেম সমাজের ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আলোকিত করবে অন্ধকার। একটি পরিবারের একজন হাফেজ/আলেম পুরো পরিবারকে নিতে পারবে জান্নাতে। এমন আশায় বুক বেধে অনেক অভিভাবক তার আদরের সন্তানকে ইসলামি/দ্বীনি শিক্ষা দানের জন্য মাদ্রাসায় পাঠান। হাদিস আছে যে কোরান সেখে আর অন্যকে সেখায় সেই ব্যক্তি উত্তম। কিন্তু কিছু কিছু কুলাঙ্গার আলেমের জন্য আমাদের এলেমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন প্রশ্ন বিদ্য হচ্ছে। ইসলামিক আইনে তার স্বাস্থি মধ্যযুগী কায়দায়, কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত আইনে বাধ্য বাধকতা থাকায় এটি সম্ভব না।
নাম প্রকাসে অনিচ্ছুক ভুক্তোভোগী ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করে জানান, আমার সন্তানকে দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষত করতে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেই। এর পর লম্পট রুবেল কৌশলে আমার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার নিয়ে মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি আমার স্ত্রীকে মুঠো ফোনে অনেক দিন ধরে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো। এবং অশ্লিল ভাষা ব্যবহার করে কু-প্রস্তাব দিতো। আমি তার বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসায় অভিযোগ করেছি। একই সাথে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বর্তমানে সে এলাকা ছেড়ে পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে ঐ মাদ্রাসার মুুহতামিম জানান, আমরা মূল অভিযুক্ত রুবেলসহ তার সহযোগী দুজনের বিরুদ্ধে নারী উত্যক্তের অভিযোগ পেয়েছি, তাই ম্যানেজিং কমেটির সাথে বসে আলোচনা করে তাদের দুই জনকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করেছি। মাদ্রাসা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এখানে ছেলে- মেয়ে আসে দ্বীনি শিক্ষা নিতে। তাই এমন অভিযোগ কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। একই সাথে ভজনপুর এলাকায় অন্য আরেকটি মাদ্রাসায় একটি বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করতো রুবেল। এমন নারী ঘটিত অভিযোগে সে মাদ্রাসা থেকেও তাকে বহিস্কার করা হয়। আশা করছি ইসলামী লেবাস পড়া এই ব্যক্তিকে যেন কোন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিয়ে ইসলামের ও শিক্ষকতার নাম খারাপ করার আর কোন সুযোগ না দেয়া হয়।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া জানান, নারী উত্যক্ত কারিদের কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।