দিনাজপুরে রাস্তার পার্শে সড়ক বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

মো: মঈন উদ্দীন চিশতী, দিনাজপুর:

দিনাজপুর শহরের পুলহাট থেকে খানপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তার পার্শে সড়ক বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সড়ক বিভাগের এই উচ্ছেদ অভিযানের জন্য জারী করা গণবিজ্ঞপ্তির আইনানুগ বৈধতা নেই। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা হলে এক হাজার জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, দুই হাজার মানুষের দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা পড়বে এবং ৫ হাজার পরিবার হুমকীর মুখে পড়বে বলে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর ২ টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স এ ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্ব আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন, নুরুল মঈন মিনু, ভুক্তভোগী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও চালকল মালিক মাহবুব আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় ফরহাদুল ইসলাম, ফজলুর রশিদ সহ প্রমুখ।

এর আগে সকাল ১১ টায় স্থানীয়রা দিনাজপুর পুলহাট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। পরে তারা দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দিনাজপুর থেকে খানপুর পর্যন্ত (জেড-৫৮০২) মহাসড়কের উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন এবং উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে সকলের অবগতির জন্য মাইকিং করে চলেছেন।

এর আগে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ কর্তৃক সার্ভে চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও অগনিত ছোট ছোট ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও বাড়ী উচ্ছেদের লক্ষ্যে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু সড়ক বিভাগ কোন জরিপের আওতায় (সিএস, এসএ) কোনো দাগে, কত পরিমাণ জমি উচ্ছেদ করবেন তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদেরকে অবহিত করেন নাই।

জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ১৯৪২ সালে গেজেট হওয়ায় গত ৮৩ বছরের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জমি সড়ক বিভাগের রেকর্ডভুক্ত ও নথিভুক্ত করার কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। ফলে ৮৩ বছর ধরে ওইসব জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের রেজিষ্ট্রার কর্তৃক দলিলাদি সম্পন্ন এবং নাম খারিজসহ খাজনাদি পরিশোধ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। এই খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছেন।

এর আগেও ২০০২ সালে সড়ক বিভাগ গেজেটের আওতায় সকলকে উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেছিল। ওই নোটিশের বিরুদ্ধে অনেকেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন বা মিসকেস করেছিলেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষের কাগজপত্র ও প্রমাণাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সড়ক বিভাগকে বর্ণিত গেজেটে জমির পরিমাণ উল্লেখ করে রেকর্ডভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আদেশ প্রদান করেন। রেকর্ডভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। দিনাজপুর সড়ক বিভাগ আজ অবদি রেকর্ডভুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এছাড়াও ২০০২ সালে উচ্ছেদ নোটিশের বিরুদ্ধে অনেকেই ২০০২ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে যুগ্ম জেলা জজ আদালত-১ এ উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। মামলায় আদালত উভয়পক্ষের শুনানি অন্তে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যা এখনও বলবদ আছে।

ওইসব বিষয় যথাযথ প্রতিকার না করে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ পুনরায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় লালদাগ দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। বিষয়টি কোনোভাবেই আইনগত বৈধ নয়, বিষয়টি আদালত অবমাননার সামিল। ক্রমাগতভাবে কয়েকদিন যাবৎ উচ্ছেদের মাইকিং করায় আইনগতভাবে বৈধ রেকর্ডভুক্ত মালিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে।

সড়ক বিভাগ গেজেটভুক্ত জমি রেকর্ডভুক্ত করার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে বাংলাদেশ সরকারের রেজিষ্ট্রেশন অথোরিটি, ভূমি অফিস ও বাংলাদেশ সেটেলমেন্টের খতিয়ান আইনানুগ নথিপত্র বিবেচনায় সিএস ও এসএ অথবা বাংলাদেশ সেটেলমেন্ট জরিপের আলোকে নামজারীসহ খতিয়ান খাজনাদি পরিশোধের সৃষ্টি করেছেন এবং সেই মোতাবেক ৮৩ বছর যাবত বংশানুক্রমে খাজনাদি পরিশোধ করছেন। এ সব তথ্যের আলোকে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করে আইনানুগ বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা এই এলাকার মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতির সৃষ্টি করেছে। বংশানুক্রমিকভাবে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ কর্তৃক গৃহিত উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

দিনাজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওই জমিগুলো ১৯৪২ সালে গেজেটভুক্ত হয়েছে। যেহেতু গেজেট হয়েছে সেহেতু এসব জমি মালিকানা দাবি থাকবে না। আগামী ২ ও ৩ নভেম্বর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করা হচ্ছে।

আরো দেখুনঃ