দীর্ঘ ১০ ঘন্টা স্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামে অবৈধ ড্রেজিংয়ের গর্তে ডুবে নিখোঁজ দুলাল মিয়ার (৪৪) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সে একই গ্রামের মৃত ছন্দু মিয়ার ছেলে। কুমেক হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে রোববার বিকেলে তার লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
জানা যায়, গত দেড় মাস যাবত দুলাল মিয়া ইরি জমিতে পানি দেওয়ার কাজ করছিল। কৃষি জমিতে পানি দেওয়ার মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঠিক করার জন্য শনিবার সকাল আনুমানিক ১০টায় সে ড্রেজিংয়ের গর্তে নামে। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুলাল মিয়া পানিতে তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের দু’টি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বুঝতে পারি পানির গভীরতা অনেক। তাই চাঁদপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৬ সদস্যের চৌকস ডুবুরী দল এনে দীর্ঘ ১০ ঘন্টা স্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নিখোঁজ দুলাল মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। নিহত দুলাল মিয়ার বাবা ছন্দু মিয়া বলেন, আমার বউমা এখন ২ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কারন আমাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়।
মুরাদনগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ডুবুরী দল কর্তৃক উদ্ধারের পর সূরতহাল শেষে দুলাল মিয়ার লাশ আমরা থানায় নিয়ে আসি। সকালে কুমেক হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেই। এ ঘটনায় রাতেই দুলাল মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। ময়না তদন্তের রিপোর্টর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নবীপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আবদুল হালিমের ছেলে ও উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী একটানা চার বছর ধরে একই জায়গায় তিন ফসলি কৃষি জমিতে ড্রেজিং করে যাচ্ছে। সে ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে গভীর ড্রেজিংয়ের কারণে আশ-পাশের জমি ভেঙে বিশাল দিঘিতে পরিনত হয়েছে। উপজেলার ড্রেজার ও ভেকু ব্যবসায়ীরা এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দেওয়া যায় না। কেউ ড্রেজিং নিয়ে কথা বললেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ড্রেজিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আলী মাত্র কয়েক শতক জমিতে ড্রেজার বসিয়ে খনন শুরু করে এখন পুরো বিল দখলে নিয়েছে। অতিরিক্ত গতের্র ফলে কৃষকরা নিরুপায় হয়ে ড্রেজিং মালিকের কাছে নামমাত্র মূল্যে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। সে ড্রেজিংয়ের গর্তে পড়ে দুলাল মিয়া নিখোঁজ হয়।