দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সহকারী প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত
মো. সাজ্জাদ হোসেন, মুরাদনগর
দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত না করে উল্টো স্বপদে রক্ষার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের হুমকি দেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত হয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। ওই প্রতিবেদনে শিখা রানী রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়। পরে তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ করা হলেও কোন প্রকার জবাব না দেওয়ায় ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শিখা রানী রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করেন। একই তারিখে তার বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্তে শিখা রানী রায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অর্থ আত্মসাত, ইচ্ছাকৃত ভাবে চিঠি গ্রহণ না করা এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্যের অপরাধ প্রমানিত হয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ শিখা রানী রায়কে সাময়িক বরখাস্ত বহাল রেখে পূনরায় কারণ দর্শানের নোটিশ দিলেও তিনি কোন প্রকার জবাব দেয়নি। ২০২২ সালে ১৬ এপ্রিল স্কুল কর্তৃপক্ষ পুনরায় পীর কাশীমপুর আর এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই তদন্ত কমিটিও শিখা রানী রায়কে অর্থ আত্মসাত, আর্থিক অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা, পেশাগত অসদাচরণ, অবাধ্যতা ও নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্থ্য করেন। ওই তদন্তের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১২ জুন শিখা রানী রায়কে বিদ্যালয়ে চাকুরি হতে চূড়ান্ত বরখান্তের প্রস্তাব গ্রহন করে অনুমোদনের জন্য ওই দিনই আরবিট্রেশন বোর্ডে পাঠান।
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায় শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করলে সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ উপ-সচিব সাফায়েত মিয়াকে প্রধান করে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেন। ওই কমিটি পূর্বে প্রতিবেদন দেওয়া ৩টি তদন্ত কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শিখা রানী রায়ের পক্ষে প্রতিবেদন দিলে সর্বমহলে তোলপাড় শুরু হয়।
অপর দিকে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর আরবিট্রেশন বোর্ডের সভায় আপোষমূলে সমঝোতার জন্য শিখা রানী রায়কে নির্দেশ দেন। তিনি মামলা ও অভিযোগ প্রত্যাহার না করে বকেয়া বেতন ভাতাদিসহ চাকুরিতে পুন: বহালের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর কমিটির সভাপতির নিকট আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত ১৯ জানুয়ারি শিখা রানী রায়কে চিঠি দেন এবং বিষয়টি ২৩ জানুয়ারি শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করেন। ফলে শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের হুমকি দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) শিখা রানী রায় তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ হারুন আল-রশীদ বলেন, শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ নাকি অভিযুক্ত শিখা রানী রায়ের বাবার ছাত্র। যার ফলে তিনি অভিযুক্ত শিখা রানী রায়কে রক্ষা করার জন্য মাথাচ্যারা দিয়ে ওঠেছে। বোর্ড সচিবের আশকরা পেয়ে সে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে রক্ষা করার সুযোগ নেই। আরবিট্রেশন বোর্ডের উপর কেউ নেই। বিধি মোতাবেক সবকিছু করা হচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ের কমিটি অনুমোদন কিংবা ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতা শিক্ষা বোর্ডের নেই।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের বলেন, তাকে রক্ষা করার জন্য কেউ চেষ্টা করছে না। বরখাস্ত শিখা রানী রায়কে কমিটির কাছে যাওয়ার জন্য বলেছি। যদি সম্ভব হয়, দূরত্ব কমিটি বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতিকেও বলেছি। কমিটি যদি তাকে বহাল না করেন, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই।