কুমিল্লার দেবিদ্বারে একই রাতে পৃথক দুই এলাকায় সিলিন্ডার ও চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে দুইজনকে হত্যার অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনরা।
গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দুজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার পর শনিবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
উপজেলার দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামের একটি খেলার মাঠের পাশের বাড়িতে শুক্রবার রাত ১১টায় সালিশ বৈঠকে ওই গ্রামের মৃত আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে শামীম আহাম্মদ (৪১)কে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য সালিশদারদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
একই রাত ৩টায় উপজেলা সদরের মা-মনি জেনারেল হাসপাতালের একটি কক্ষে ওই হাসপাতালের আয়া শাহনাজ বেগম মিম (৫০)'কে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে এই আয়াকে কারা পিটিয়ে হত্যা করেছে জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতাল পরিচালকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত মিম দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের মৃত সেকান্দর আলীর মেয়ে।
উজানীকান্দি গ্রামের ঘটনায় প্রত্যাক্ষদর্শী, নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাতে ৮টায় মনির হোসেন ও শামীম আহাম্মদের পরিবারের মধ্যে একটি বিরোধ মীমাংসা নিয়ে মনির হোসেনের উঠানে সালিশ বৈঠক বসেছিল। সালিশে ইউপি সদস্য হিরণ সরকার, সিদ্দিক সরকার, মোস্তফা সরকার, সাইফুল ইসলাম ব্যাপারিসহ গ্রামের ১৫/২০জনকে উপস্থিত ছিলেন।মীমাংসার শেষ পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টায় পার্শ্ববর্তী গ্রাম উজানীজোড়ার মো.আলিম খন্দকারের নেতৃত্বে সাদেক খন্দকার, সুমন খন্দকার, আউয়াল খন্দকারসহ আরও ৫/৬ মনির হোসেনের পক্ষে উপস্থিত হয়ে শামীমকে চর থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারেন। পরে বৈঠকে বসা আলিম খন্দকার উত্তেজিত হয়ে নিজের বসার কাঠের চেয়ার তুলে শামীমকে এলোপাতারি পিঠাতে থাকেন। এক পর্যায়ে শামীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ১৩ (এপ্রিল) দুপুর ২টা ৩৫মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা জোবেদা খাতুন হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আয়া শাহনাজ বেগমের চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম জানায়, দেবিদ্বার মা-মনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেখানে শাহনাজ আয়ার কাজ করতেন। তার মা-বাবা, আপন ভাই-বোন নাই। বিয়েও করেনি। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীরাই ছিল তার পরিবার। তার সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকের কাছে আমানত হিসেবে আছে। শাহনাজের মাথা ও মুখমণ্ডল থেঁতলানো অবস্থায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর শনিবার ১৩ (এপ্রিল) দুপুর ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জহিরুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নয়ন মিয়া জানায়, উজানীকান্দি গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এবং শামীমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তরে জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। শাহনাজ বেগম হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। টাকা-পয়সা লেনদেন, নাকি অন্য কোনো কারণে হত্যা এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
এফআর/অননিউজ
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com