দেবিদ্বার উপজেলার ১৫টি ইউপি নির্বাচন নৌকার প্রার্থী অনেক

শান্তনু হাসান খান ।।

এখন সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্বাচন করার কথা থাকলেও সরকারি সে বিধি নিষেধকে থোড়াই কেয়ার করে জনগণ নির্বাচন মাঠে থাকছেন। ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপি নির্বাচন করতে যাচ্ছে সিইসি-স্থানীয় মাঠ প্রশাসন মাধ্যমে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ব্যাপক সহিংসতা আর সর্বশেষ ৫ম ধাপে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে ৫টি ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করেছে স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। ৫ম ধাপে নির্বাচনে সংবাদকর্মী আহতসহ ১১ জন নিহত হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন কুমিল­াতে সুষ্ঠু হয়েছে। এতে কুমিল­ার অনেক ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী উঠে আসতে পারেননি।

আর সে আলোকে আগামী ২১ জানুয়ারি ও ৭ ফেব্র“য়ারি পরবর্তী দুই ধাপ নির্বাচনে ১৩৮ ও ২১৯টি ইউপি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে কুমিল­ার দেবিদ্বার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন আর বুড়িচং এর ৯টি ইউনিয়ন তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসছেন। প্রতীক বরাদ্ধের আগেই উঠান বৈঠকের নামে তারা নিরবে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে এবার দেবিদ্বারের বরকামতা ও গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নে ইভিএম এ ভোগ গ্রহণ চলবে। বাকীগুলো ব্যালোটে। সরজমিনে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থীরা প্রতিটি ইউনিয়নে আছেন। তবে প্রার্থী বাছাই করতে স্থানীয় এমপি তথা সিলেকশন কমিটি দ্বারা বাছাই সঠিক হয়নি বলে এলাকাবাসীর চাপাক্ষোভ রয়ে গেছে। মুরাদনগরে জাহাপুরে রয়েছে ১১ জন প্রার্থী ১০ জনই নৌকা চাইবেন। আর দেবিদ্বারে জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন নির্বাচনে হাফ ডজন। এখানে বিএনপি’র প্রার্থীরা প্রকাশ্যে না থাকলেও নিরবে আছেন। আর অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি’র অনেক ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাক্সে জমা হচ্ছে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতে এ ধারাবাহিকতা চলার সম্ভাবনা।
জাফরগঞ্জের বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন আগামীতে নৌকা নিয় মাঠে থাকতে চান। তবে জনগণ এবার তাকে মাইনেসের খাতায় রেখেছেন। বরং জনগণের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন সরকার ও গতবারের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। এদিকে জাফরগঞ্জে আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে অনেক পোস্টার ব্যানার বিভিন্ন জায়গায় শোভা পেলেও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের মৌসুমে অনেক হাইব্রিড নেতার দেখা মিলে। এখানে ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন তাদেরকে আওয়ামীলীগের কোন কর্মকান্ডে দেখা যায়নি খুব একটা। যেহেতু আমি সভাপতি, আমার সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান। সঙ্গত কারণে আমি তাকে পছন্দ করতেই পারি। তবে সিলেকশান কমিটি আবুল হোসেন সরকার কিংবা আনোয়ার হোসেনকে নৌকার প্রতীক বরাদ্ধ করেন- তাহলে দলীয়ভাবে নৌকার প্রার্থীকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো।

অপর দিকে প্রার্থীতা চাওয়ার জন্য জাহেদুল আলম, ময়নাল হোসেন, জাকির হোসেন এবং ওয়ালি উল­াহ সওদাগর আগামী নির্বাচনে জাফরগঞ্জের ইউপি প্রার্থী। তবে জনগণ আনোয়ার হোসেন ও আবুল হোসেন সরকারের কথাই জোর দিয়ে বলছেন। আবুল হোসেন সরকার জাফরগঞ্জ ৪ নং ওয়র্ডের ভোটার। পড়াশোনা চরবাকর হাই স্কুলে। পরে সুজাতআলী ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৯০ তে কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগের প্যানেলে সাহিত্য সম্পাদকের পদ দিয়েই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। দীর্ঘদিন স্বচ্ছতা এবং ক্লিন ইমেজের মধ্যদিয়ে ৩ বারের সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, দল থেকে নমিনেটেড হতে পারলে ইনশল­াহ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারবো। অপর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ২নং ওয়ার্ডের ভোটার। এলাহাবাদ স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। গোটা পরিবারটাই আওয়ামী ঘরনার মানুষ। যদিও এলাকায় তাকে জাতীয় পার্টির কর্মী হিসেবে তাকে চেনে। এ আগে ২০১৬ তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ৫ হাজারের উর্ধ্বে ভোট পেয়েও ১ হাজার ৭৮৫ ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে তাকে টেকনিক্যাল ভাবে পরাজিত দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বর্তমানে এলাকার কমিউনিটি পুলিশিং সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক।

বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিগত দিনের কর্মকান্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত-আলোচিত। দুর্নীতির পাহাড়স্তুপ জমে আছে তার বিরুদ্ধে। মাদকসহ গোমতীর বালু মহল এবং অনেক অপকর্মের হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। এই নিয়ে বিগত দিনে মিডিয়াতে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আবুল হোসেন সরকার স্থানীয় এমপি রাজি মোঃ ফখরুল আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এর দিক নির্দেশনায় নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছেন। অপরদিকে কুমিল­া উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক- রুহুল আমিন ও রওশন আলী মাস্টার মন্তব্য করে বলেন- আবুল হোসেন সরকার যদি নৌকা নিয়ে মাঠে নির্বাচনে থাকেন, আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি উঠে আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন। আর নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে জাফরগঞ্জকে ঢেলে সাজাবেনৎ। তিনি বলেন- আমি কোনো প্রফেশনাল চেয়ারম্যান হয়ে – টিআর-কাবিখা’র পেছনে দৌড়াতে চাই না। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যদি আমি শেষ অবধি নির্বাচনের মাঠে থাকি। আর সবটাই হবে মাননীয় সাংসদ এর দিক নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য থেকেই। তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই আমার।

আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।

আরো দেখুনঃ