স্বামী বাহরাইন প্রবাসী। দেশটির আরেক প্রবাসী যুবকের সঙ্গে পরকীয়া চলছিল গৃহবধূর, এমন অভিযোগে দুজনকে গাছে বেঁধে প্রায় ৯ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়েছে। পরে গৃহবধূকে এককাপড়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী কর্তৃক জানানো হয়, দুজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে গৃহবধূর স্বামী দেশে ফেরার পর। মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাবরী মিয়ার বাড়িতে।
পরকীয়ায় অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী রোকসানা বেগম এবং একই উপজেলার গৌরসার গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী নূরুল হক।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ২-৩ বছর ধরে উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী রোকসানা বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার গৌরসার গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী নূরুল হকের পরকীয়া চলছিল। মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার দিকে রোকসানা নুরুল হককে মোবাইল ফোনে ডেকে তার ঘরে আনেন। নূরুল হক বাড়ি থেকে বের হলে তার বড় ভাই মো. এনামুল হক তাকে অনুসরণ করে ওই বাড়িতে আসেন এবং রোকসানার দাদা শ্বশুর বাবরী মিয়াকে ডেকে এনে দুজনকে ঘরে তালাবন্দি করেন।
পরে বাড়ির লোকজন এসে পরকীয়ায় আটক দুজনকে প্রায় ৯ ঘণ্টা গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালায়।
ঘটনার পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সালিশ করে। সালিশে রোকসানার প্রবাসী স্বামী বাড়ি ফিরলে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং রোকসানাকে এক কাপড়ে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নুরুল ইসলামকে তার ভাই ও স্বজনদের জিম্বায় দেওয়া হয়।
স্থানীয় ১নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আবুল হোসেন সভাপতিত্বে ওই সালিশে উভয় পক্ষের লোকজন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সালিশদার মোজাফ্ফর আহমদ, নজরুল ইসলাম, রমিজ উদ্দিন, সাদেক মিয়া, বাবরী মিয়া, অহিদ মিয়া, আজিজ খান, রঞ্জিত দে, মহিলা মেম্বার নাছিমা বেগম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে রোকসানা বলেন, ‘নুরুর সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। পরে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিনি রাত ৩টায় এসে আমার ঘরের দরজা নক করলে তাকে ঘরে ঢুকতে দিই। এরই মধ্যে কিছু লোকজন এসে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সালিশে আমাকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’
নুরুল হক বলেন, ‘রোকসানা আমাকে বিদেশ থেকে প্রায় ৬ মাস আগে ডেকে আনে। আমাদের কোর্ট ম্যারিজ হয়। গতরাতে আমাকে ফোনে ডেকে আনে।’
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার আবুল হোসেন জানান, এ বিষয়ে সালিশ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তাই যার যার বাবার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। রোকসানার স্বামী প্রবাস থেকে আসার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে ওই ইউপির মহিলা মেম্বার নাছিমা বেগম বলেন, এটা অমানবিক কাজ করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টা তাদের উন্মূক্ত জায়গায় আটকে রেখে, এতোগুলো মানুষের সামনে গাছের সঙ্গে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতন করার পর বলা হল, যার যার বাবার বাড়িতে চলে যাও। পুরুষ লোকটির ভাগ্যে যাই হোক কিন্তু মহিলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই এক কাপড়ে বিদায় করা হল। তার স্বামী দেশে আসলে বিচার হবে বলা হল, বিচারে রোকসানাকে তালাক দিলে তার দায়ভার নুরুকে বহন করতে হবে, এমন কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই। কাউকে দোষি সাভ্যস্তও করা হল না। এটা ন্যায় বিচার হলনা।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। তবে যেহেতু বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি, তা খতিয়ে দেখবো।