কুমিল্লার দেবীদ্বারে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে, ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে, স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনগন তার বিরুদ্ধে নারীকেলেঙ্কারীর অভিযোগ এনে, শিক্ষক অপসারনের দাবীতে বিদ্যালয় ঘেড়াও করে রাখে।
এসময় ওই প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম তার নিরাপত্তায় পুলিশের সহযোগীতা চেয়ে থানায় ফোন দেন। সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক মন্ডলী, অভিভাবক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বিদ্যালয়ে সালিসের মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাবে পুলিশ প্রহরায় প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।
প্রধান শিক্ষক জনরোষে পরার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিমকে নারীর সাথে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দেবীদ্বার পৌর এলাকার ছোট আলমপুরে একদল যুবক আটক করে।
আটকের পর স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, স্যারকে বাঁচাতে। তখন স্যার কোথায় আছে জানতে চাইলে আমাকে ছোট আলমপুর বয়লারের নিকট যেতে বলেন। আমি রিক্সা নিয়ে ওই খানে যাওয়ার পর মাস্ক পড়া দুই যুবক এসে আমার হাতের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং আমাকে জোরপূর্বক টেনে হেচড়ে সেলিম স্যারের কাছে নিয়ে যায়। ওই খানে আটক অবস্থায় স্যারকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, স্যার আপনি এখানে কেন। উত্তরে স্যার বললো, আমি আমার খালাতো বোনকে নিয়ে যাওয়ার পথে তারা আমাকে আটক করে। তখন স্যার আমাকে বলে, আমার নিকট ৫ হাজার টাকা আছে, আপনি আরো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নেন। তখন আমি আমার কাছে কোন টাকা নাই বললে, ওই যুবকরা আমাকে বলে টাকা না থাকলে আইছ কেন ? বলে একজন মহিলার সাথে স্যারের আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে বলে- তাকে ছাড়িয়ে নিতে ১০ লক্ষ টাকা লাগবে। এই বলে ঘাড় ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমাকে অন্ধাকারের মধ্য অনেক দুর এনে ছেড়ে দিয়ে যায়।
আমার চোখে দুইবার অপারেশন হওয়ায় আমি রাতে চোখে কম দেখি, ওই খান থেকে অনেক কষ্টে আমি রাস্তায় এসে বিদ্যালয় পরিচলনা পরিষদ সদস্য কবির হোসেন ও ধর্মীয় শিক্ষক কামরুজ্জামান ভুইয়াকে ফোনে বিষয়টি জানাই।
তারা এসে রাত ১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় প্রধান শিক্ষক স্যারকে খোঁজা খুঁজি করে, এক পর্যায়ে মোবাইল বন্ধ পেয়ে স্যারের বাড়িতে জানানোর জন্য তারা চলে যান। রাত ২টায় স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমি স্যারের জিম্বাদার হলে তারা স্যারকে ছেড়ে দিবে।
তখন আমি স্যারকে বলি স্যার আমার কাছে কোন টাকা নাই, আমি কিভাবে জিম্বাদার হবো। তখন স্যার বলে, শুধু আমি বললে তারা স্যারকে ছেড়ে দিবে, বাকি ব্যবস্থা স্যার করবে। কোন উপায় না দেখে স্যারের অনুরোধে আমি তাদের সাথে স্যারের জিম্বাদার হওয়ার কথা কলি। কিছুক্ষণ পর স্যারকে আবার ফোন দিলে স্যার আমাকে জানায়, সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে আরো ২ লক্ষ টাকা পরিশোধের আশ্বসে স্যার ছাড়া পায়।
এখন তিনি নিরাপদেই আছেন এবং সিএনজি যোগে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন বলে জানান।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. কবির আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের ফোন পেয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবু হানিফকে নিয়ে দেবীদ্বারে ঘটনাস্থলে যাই। ওই খানে আমরা সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক কামরুজ্জামান ভুইয়াসহ স্থানীয় কিছু লোকজনকে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে খোঁজা খুঁজি করি এবং প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে রাত ১টায় বিষয়টি জানানোর জন্য তার বাড়িতে যাই।
কিন্তু বাড়িতে অনেক ডাকা ডাকির পরও কোন সারা শব্দ না পেয়ে ওইখান থেকে চলে আসি। পরে রাত দুইটায় সহকারী প্রধান শিক্ষক ফোন দিয়ে জানায়, প্রধান শিক্ষক ছাড়া পেয়েছে।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত বাঙ্গরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, এক লোক আমার কাছে কিছু টাকা পেত, ওই টাকার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কত টাকা পেত এবং পাওনাদার কে কারা আপনাকে মারধর করল তা জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দেননি তবে ছোট আলমপুর বয়লারের পাশের যে মহিলাকে নিয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত, তিনি কি আপনার আপন খালাবোন ? জবাবে বলেন, তিনি আমার আপন খালাতো বোন না।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, বাঙ্গরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং লোক মুখে শুনলেও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) সকালে প্রধান শিক্ষক তার নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ চাইলে আমি পুলিশ পাঠাই, আমার পুলিশ স্কুল থেকে তাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।