ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন দেশের প্রথম আর্চ স্টিল সেতু। নদীর ওপর কোনো পিলার ছাড়াই শুধু দুই পাড়ের দুটি পিলারের ওপর তৈরি হবে সেতুটি। এতে নদীর পানিপ্রবাহে যেমন সৃষ্টি হবে না কোনো বাধা তেমনই নির্মাণ খরচ হবে তুলনামূলক কম।
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের মাঝামাঝিতে শুরু হবে। এটি যানজট নিরসনের পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও আশপাশের জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একমাত্র সড়ক সেতু পার হয়ে জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা যেতে যানজট নিরসনে ২০১৮ সালে নতুন সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৫ বছর পর অবশেষে ব্রহ্মপুত্রের বুকে নির্মিত হতে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশবান্ধব এ আর্চ স্টিলসেতু। সেতু বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ জন্য চূড়ান্ত করে নকশা। অ্যানিমেটেড ভিডিওতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ময়মনসিংহবাসীর স্বপ্নের সেতু।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকেই শুরু হবে মূল সেতুর সংযোগ সড়ক, যা হবে সেতুর অপর প্রান্ত চায়না মোড় পর্যন্ত ৬ দশমিক দুই শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ। সংযোগ সড়ক মূল সেতুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পড়বে ২৫০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস। এর পরই সংযোগ সড়ক মিলবে ৩২০ মিটার দীর্ঘ মূল আর্চ স্টিল সেতুর সঙ্গে। সেতুতে ২০২ মিটার র্যাম্পসহ ভারী যান চলাচলের জন্য ৪ লেন এবং মোটরসাইকেল ও হালকা যান চলাচলের জন্য ২ লেনসহ মোট ৬টি লেন থাকবে।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক কেবিএম সাদ্দাম হোসেন জানান, আর্চ স্টিল সেতুতে লম্বা স্প্যান ব্যবহার করায় নদীর মাঝে কোনো পিলার ব্যবহার করা হয় না। কেবল ২ পাশেই পিলার ব্যবহার করায় নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলে কোন বাধা সৃষ্টি হয় না, এমনকি সেতু থাকে নিরাপদ ও টেকসই। ৩ হাজার ২শ ৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে সেতু নির্মাণে।
ঢাকার হাতিরঝিল ও পূর্বাচলে আর্চ পদ্ধতিতে একাধিক কংক্রিটের সেতু নির্মিত হলেও আর্চ স্টিল সেতু হিসেবে দেশে এটি প্রথম সেতু। ব্রহ্মপুত্রের বুকে সেতুটি নির্মিত হলে ময়মনসিংহ ও আশপাশের জেলার যানজট শতকরা ৮০ ভাগ কমে যাবে বলে মনে করেন ময়মনসিংহ সদর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
এ ছাড়া সীমান্ত জেলাগুলোতে পণ্যপরিবহনে অর্থনৈতিক দিক থেকেও সেতুটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা। দরপত্র মূল্যায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া একেবারে শেষ পর্যায়ে থাকায় কয়েক মাসের মধ্যেই সেতুর কাজ দৃশ্যমান হবে যা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে বলে আশা সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
শান্ত/অননিউজ