করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের কাজের
মেয়াদ চার দফায় বেড়েছে। যা শেষ হওয়া কথা রয়েছে আগামী বছরের জুন মাসে।
এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দাবি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। এটি চালু হলে রেলপথেও আন্তদেশীয় বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে
বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর রেল যোগাযোগ চালু হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
আখাউড়া থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড
ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সাথে চুক্তি হয়। দুই দেশের এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার।
প্রকল্পটি (বাংলাদেশ অংশ) বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। তবে কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় দেড় বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ২০২০
সালের ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে প্রথম দফার বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি রেলপথ নির্মাণের কাজ। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ে প্রকল্পের। এভাবে চার
দফায় বাড়ানো মেয়াদ পর এবার কাজ শেষ হওয়া কথা রয়েছে আগামী বছরের জুন মাসে। তবে এখনও ধীরগতিতেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ। আখাউড়া-
আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আখাউড়ার গঙ্গাসারগর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে রেলপথের জন্য আনা পাথর, ¯িøপার ও রেললাইন রাখা আছে।
চলছেকাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ। যা এখনও প্রায় অর্ধেক বাকি। প্রকল্পের ১৬টি কালভার্টের কাজ প্রায় শেষ। তবে আখাউড়ার মনিয়ন্দ থেকে শিবনগর
পর্যন্ত এখনও মাটি ভরাটের কাজ চলছে। যদিও গঙ্গাসাগর রেল স্টেশনের অদূরে মনিয়ন্দ অংশ এবং শিবনগরে জিরো লাইন অংশে রেলাইন বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে
টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কান্ট্রি হেড (বাংলাদেশ) শরৎ শর্মা বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। প্রকল্পের
কাজের মালামালও ভারত থেকে আনা যায়নি। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মালামাল আনার অনুমতি পেতে বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন এ
প্রকল্পের সকল অনিশ্চিয়তা কেটে গেছে। আমাদের এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। এখন শুধু মাটির কাজ এবং বিল্ডিং ও কালভার্টগুলোর ফিনিশিং কাজ চলছে। আশা
করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে’। এদিকে আখাউড়া-আগরতলা রেলথটি চালু চলে আন্তদেশীয় বাণিজ্যের দ্বার যেমন উন্মোচিত হবে, তেমনি
আগরতলার সঙ্গে কমবে কোলকাতার দূরত্ব। বর্তমানে রেলপথে আগরতলা থেকে কোলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। যা পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩৮ ঘণ্টার
মতো।
তবে আখাউড়া হয়ে কোলকাতা যেতে আগরতলাবাসীকে পাড়ি দিতে হবে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার রেলপথ। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। এছাড়া
বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর রেলযোগাযোগ স্থাপন করবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির
সভাপতি আজিজুল হক বলেন, ‘পণ্যের দাম অনেকটাই পরিবহন খরচের ওপর নির্ভর করে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের দামও বাড়ে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে ট্রেনে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম হবে। এতে করে আমদানিকৃত পণ্য দেশের বাজারে কম দামে সরবরাহ করা যাবে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব
ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি’।
এ ব্যাপারে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই রেলপথ দিয়ে আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত
ট্রেন চলাচল করবে। পাশাপাশি রেলপথটি দিয়ে পণ্য পরিবহন হবে’।