কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে সবুর মিয়া বলছিলেন, ‘মাংস-মুরগি খাই না আইজ চার-পাঁচ মাস। ভ্যানের ট্যাকা জমা দিয়া যা থাহে তা দিয়া চাল কিনলে তরকারি কিনতে পারি না। তরকারি কিনলে প্রয়োজন মতো চাল কিনতে পারি না। এত দাম জিনিসপত্রের। কেমনে যে দিন যায় আল্লায় জানে।
দর কষাকষি করে সাড়ে ৩ শ’ টাকা দিয়ে পাঁচমিশালি এক কেজি মাছ কিনেছেন একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আফজল হোসেন। মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতন পান। সেই টাকায় ঘরভাড়া, এক ছেলে এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেয়ার পর আর তেমন কিছু হাতে থাকে না।
রিকশাচালক খায়রুল আলম। সারাদিন যানজট ঠেলে রিকশা চালিয়ে সাড়ে ৬ শ’ টাকা আয় হয়। দেড় শ টাকা জমা দেন মালিককে। পাঁচ শ টাকা থাকে হাতে।
খায়রুল বলেন, ‘মাছ-তরকারির যে দাম, ঘরভাড়া, পোলা মাইয়ার পড়ার খরচ যেই বাড়া বাড়ছে, দামের কারণে ভালো-মন্দ খাওয়া ছাইড়া দিছি। শইলডা ভালো না। একদিন রিকশা চালাইলে আরেকদিন পারি না। এমনেই দিনকাল যাইতাছে। দাম না কমলে আমরা কম খাইয়াই মইরা যামু।
মাংস-মুরগি দূরে থাক, স্বল্প আয়ের মানুষের আমিষের উৎস পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছও এখন তাদের নাগালের বাইরে বলা যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ এখন সবজি বাজারে ঢুকতেও ইতস্তত করেন। কারণ আলু ও টমেটো ছাড়া প্রায় সব শাক-সবজিরই দাম বাড়ছে হু হু করে। রোজার মধ্যে এভাবে দামের ঊর্ধ্বমুখিতায় কান্না চেপে রাখলেও মন ভার লুকাতে পারছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রমজানের ২য় দিনে নগরীর রাজগঞ্জ, নিউমার্কেট ও বাদশা মিয়ার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে লম্বা বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০, টমেটো ৩০, ঢেড়স ৮০, আলু ২০-২২, কাঁচা মরিচ ১০০, পটল ৮০, ধনিয়া পাতা ১০০, শসা (হাইব্রিড) ৫০, দেশি ১২০, লতি ৮০, শিম ৮০, চিচিঙ্গা ৫০, গাজর কেজিপ্রতি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
পুঁইশাকের আঁটি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর রমজানে শরবত তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান লেবুর দাম হুট করে বেড়ে হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
মাছের বাজার আরও গরম। সিলভার কার্প মাঝারি সাইজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২০০ টাকা, মাঝারি সাইজের রুই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৫০-১৮০ টাকা, কার্পু ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ির কেজি ৭০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশও আকার অনুযায়ী ৮০০-১৬০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নিত্যপণ্যের দামে উর্ধ্বগতি নিয়ে কুমিল্লার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বেড়েছে এটা সত্য। তবে এ বছর আমরা প্রতিটি হাট-বাজারে প্রচার-প্রচারণা করেছি, যেন রমজান বা অন্য সময়ে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য না কেনা হয়। তাহলে কেউ আর অন্যায্য মুনাফা করতে পারবে না। এছাড়া নিমসার কাঁচা বাজার থেকে পণ্য কিনলে ক্রয় রশিদ রাখতে হবে। বাজার মনিটরিং করার সময় আমরা অসামঞ্জস্য দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। এমন সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণায় আমরা মানুষের সাড়া পেয়েছি।
এতে আস্তে আস্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।