নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছে পৌরসভার ১০জন কাউন্সিলর। সোমবার (৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাউন্সিলরদের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করা হয়। পৌরসভার প্যানেল মেয়রসহ ১০ জন কাউন্সিলর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে মাসিক সভা, বাজেট সভাসহ সব ধরণের কার্যক্রম আমরা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্যানেল মেয়র আসলাম ভূঁইয়া বলেন, কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা হাট-বাজার ইজারা বন্দোবস্তের মাধ্যমে গত ১৪২৮ বঙ্গাব্দে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, ১৪২৯ বঙ্গাব্দে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০১ টাকা, ১৪৩০ বঙ্গাব্দে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা ইজারা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ করেছেন। টাকার মোট পরিমাণ ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৬০১। এ টাকা তিনি পৌরসভায় জমা দেননি। এছাড়া ১৪৩১ বঙ্গাব্দে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ টাকা অনাদায়ী রয়েছে।
এদিকে, ভ্যানহাটের সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা না দিয়ে মেয়র ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োগে দ্বিতীয় দরদাতাকে ইজারা দিয়েছেন। এছাড়া নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত পছন্দের লোক দিয়ে সাতটি হাট-বাজার খাজনা আদায় করে সেই টাকা মেয়র নিজেই আত্মসাত করেছেন। পৌরসভার দু’টি করে রোলার এবং ট্রাক ব্যক্তিগত ভাবে ভাড়া দিয়ে সেই টাকাও আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে মেয়রের বিরুদ্ধে।
অপরদিকে, কাউন্সিলরদের না জানিয়ে বিভিন্ন জায়গা বন্দোবস্ত প্রদান করা এবং উন্নয়নমূলক কাজে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত না করে মেয়রের ইচ্ছেমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পৌরসভার কমিউনিটি সেন্টারের সামনের জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত মার্কেট নির্মাণ করছেন পৌরমেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা। মাস্টাররোলেও প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কর্মচারীদের নিয়োগ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন অন্যান্য কাউন্সিলরবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত-প্যানেল মেয়র আসলাম ভূঁইয়াসহ ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অশোক কুমার ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ডের তপন কুমার দত্ত, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবুর শেখ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রদীপ বর্মন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব শেখ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এহসানুল হক রানা, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার মুজিবর রহমান এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভীন রীতা ও নাসরীন বেগম।
কাউন্সিলরা আরো বলেন, কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরার দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পৌরসভার যে ক্ষতি হয়েছে; আমরা তা মেনে নেবো না। আত্মসাতকৃত টাকাও পৌরসভায় জমা দিতে হবে। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে মাসিক সভা, বাজেট সভাসহ সব ধরণের কার্যক্রম আমরা বর্জন করব।
এ ব্যাপারে কালিয়া পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে; তা উদ্দেশ্যমূলক। কোনো ধরণের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। হাট-বাজার ইজারাসহ পৌরসভার যেসব উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, তা কাউন্সিলরদের জানিয়ে করা হয়েছে। সেইসব আলোচনা সভার প্রমাণ পৌর পরিষদে রয়েছে। এছাড়া রোলার এবং ট্রাক ভাড়ার টাকা নিয়ম মতো পৌরসভায় জমা হয়ে থাকে। আর মাস্টাররোলে যেসব কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তা পৌরসভার কাজের গতি বাড়ানোর স্বার্থেই দেয়া হয়েছে। বরং কয়েকজন কাউন্সিলর ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সুবিধা নিতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন।’