নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হলো আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা। লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম এই ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে জড়ো হয়েছিলো বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো মানুষ। করোনা ও রোজার কারনে চার বছর বন্ধ থাকার পর এবছর ঘোড়া দৌড় ও গ্রামী মেলা মানুষের মাঝে যেন অন্যরকম উৎসব-আমেজে পরিণত হয়। গত ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে দুদিনব্যাপী এ উৎসব চলে আজ ভোর রাত পর্যন্ত। মেলার শেষদিনে মঙ্গলবার বিকালে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানান, স¤্রাট আকবরের আমল থেকে ব্রাহ্মণডাঙ্গায় বৈশাখী মেলা ও ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে আসছে। বংশ পরম্পরায় এ আয়োজন যেন এই এলাকার ব্রাহ্মণডাঙ্গা, বাড়ীভাঙ্গা, হান্দলা ও চরব্রাহ্মণডাঙ্গা সহ পাশ^বর্তী কয়েকটি গ্রামের অন্যরকম উৎসবে রূপ বিরাজ করে। ধর্মীয় উৎসবে আত্মীয় স্বজনের আগমন না ঘটলেও মেলায় প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আগমনে মিলন মেলায় রূপ নেয়।
প্রতিযোগিতায় নড়াইল, যশোর, খুলনা. মাগুরা, ফরিদপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ২২টি ঘোড়া অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় প্রথম খুলনার বটিয়াঘাটার ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুরের ঘোড়া ও তৃতীয় হয়েছে লোহাগড়া উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের ঘোড়া। বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের নগদ অর্থ দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিযোগিতা দেখতে আসেন নারী, পুরুষ সহ নানা বয়সী মানুষ।
মেলায় নড়াইল সহ আশেপাশের জেলা থেকেও নানা বয়সী মানুষ ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছে। এমন আয়োজন দেখতে পেরে খুশি এসব দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থী রাসেল হুসাইন বলেন, ‘ ব্রাহ্মণডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা অনেক জামজমকভাবে হয়ে থাকে। সেই খবর শুনে নড়াইলের দক্ষিণপ্রান্তের শেষ সিমানা থেকে এসেছি। মেলা দেখতে এসে আমি অভিভুত। এতো বড় মেলা খুলনা বিভাগের অন্য কোথায় হলে বলে আমার জানা নেই। লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছে। প্রতিবছর এমন আয়োজনের অনুরোধ রইল।’
দর্শনার্থী জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় দেখতে এসেছেন নড়াগাতী থেকে। লোকজ সংস্কৃতির ধারক হিসেবে এই মেলাটি যাতে আগামীতে টিকে থাকে এই দাবি জানাই। কেননা বর্তমানে আমরা আকাশ সংস্কৃতি, ফেসবুক ও ইউটিউব নিয়ে পড়ে আছি। গ্রামীণ এসব মেলার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত আনন্দ পেতে পারি। এসব মেলায় স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারী সহযোগিতা পেলে আরো প্রাণবন্ত মেলায় রূপ নিতে পারে।’
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোঃ তাইজুল ইসলাম জানান, পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বর্তমান সম্মিলিতভাবে এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। বর্তমান তরুন সমাজ আকাশ সংস্কৃতি, মোবাইল, ফেসবুক ও ইউটিউবে আসক্ত। তাছাড়া অনেকেই মাদকে আসক্ত। তরুন সমাজকে অপসংস্কৃতি থেকে ফিরিয়ে আনতে ও লোকজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে ঐতিহ্যবাহী সব খেলাধুলাকে ধরে রাখতে হবে। মেলার পরিধি বাড়াতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
দুদিনব্যাপী এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী পালগানের আসর সহ গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। মেলায় হস্তশিল্প, বেতশিল্প, কুঠির শিল্পসহ দুই হাজারের বেশি দোকানী পসরা সাজিয়ে বসে।
এফআর/অননিউজ