নড়াইলে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে ভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়েছে। দিবস উপলক্ষে নড়াইল আদালত ও এর সংলগ্ন এলাকা সেজেছিল বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্য ও লোকজ সাজে। নড়াইল জেলা জজ আদালত এর সিংহ দরজা আচ্ছাদিত হয়েছিল সোনালী আঁশ পাট ও মাটির তৈরী লোকজ উপাদান দিয়ে। গ্রামীণ আলপানায় অংকিত প্রবেশ মুখে বিলুপ্তপ্রায় হারিকেন এর প্রজ্বলিত আলো যেন অসহায় মানুষকে সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছে, দিচ্ছে আলোর পথে যাত্রার ইঙ্গিত। গেটের দুই পাশে মাটির চারা দিয়ে তৈরী দূর্গের উপর গ্রামীণ পোলোর ভেতরে মা পাখির পরম যত্নে লালিত ছানা প্রতীক হয়ে ভরসা যোগাচ্ছে অসহায় বিচারপ্রার্থীদের ‘আমরা আছি তোমাদের পাশে’। কোন পরিবেশ বিধ্বংসী অপচনশীল বেলুন, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে নয়, এ দিবস উপপক্ষে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণ ও শিল্পকলা একাডেমীর স্টেজ সেজেছিল সুপারির খোল এর তৈরী ফুল, মাটির হাঁড়ি, বেত, ডালা, কুলা ও দেশীয় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। স্টেজের পেছনে ছিল চটের উপর অঙ্কিত চিত্রশিল্পী ধর্মদাস মল্লিক এর আঁকা লিগ্যাল এইড অফিস আইনগত সহায়তা প্রদান এর ছবি।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টায় স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নড়াইল আদালত চত্বরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও লিগ্যাল এইডের স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন উড়িয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের শুভ সূচনা করা হয়।
উদ্বোধন করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আলমাচ হোসেন মৃধা। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমী হলরুমে শত শত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা সভায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আলমাচ হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ প্রনয় কুমার দাস, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কবির উদ্দিন প্রামানিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন, সাইফুল আলম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা, পুলিশ সুপার মোহাঃ মেহেদী হাসান, সিভিল সার্জন ডাঃ সাজেদা বেগম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি উত্তম কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কুমার বাগচী, জিপি অচিন কুমার চক্রবর্তী, পিপি এমদাদুল ইসলাম প্রমুখ সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, আইনজীবীবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, আইনজীবী সহকারী, জেলা লিগ্যাল এইড, অফিস, নড়াইল এর সুবিধাভোগী ক্লায়েন্ট বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আলমাচ হোসেন মৃধা বক্তব্যে বলেন “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল এ দেশের মানুষ যেন সমান অধিকার পায় এবং ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত না হয়। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীন দেশের জন্য যে সংবিধান উপহার দিয়েছেলেন তার ১৯ ও ২৭ অনুচ্ছেদে সুযোগের সমতা ও আইনের দৃষ্টিতে সমতার কথা বলা হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আর্থিক ভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ সামাজিক কারনে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীদের সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান কল্পে এবং সাংবিধানিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০’ পাশ করে যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক মাত্রা যুক্ত করেছে।”
সভায় শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী হিসেবে রাজিয়া সুলতানা ও কাজী আবুল কালাম কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এইড এর জনসচেতনা বিষয়ক জারিগান পরিবেশন করেন রওশন আলী বয়াতী ও তাঁর দল। এছাড়া লিগ্যাল এইড বিষয়ক একটি মনোজ্ঞ নাটিকা ‘মিলিদের স্বপ্নপূরন’ পরিবেশিত হয়।
এফআর/অননিউজ