১৫কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ১১টি গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে নববর্ষকে বরণ করলো তিন শতাধিক শিক্ষার্থীরা। সাইকেল র্যালির মাঝে মাঝে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীরা বর্ষবরণের গান ও নৃত পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। এয়াড়া মিষ্টি মুখও করানো হয় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের। ব্যতিক্রমধর্মী এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার সকাল ৭টার দিকে সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীরা নববর্ষের পোষাকে সজ্জিত হয়ে সাইকেল র্যালি বের করে। কৃষক, শ্রমিক, বাউল সহ নানা সাজে সজ্জিত ও আল্পনা এঁকে শিক্ষার্থীরা সাইকেল র্যালিতে অংশ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ছিলো বর্ষবরণের প্লাকাড ও ফেষ্টুন।
সাইকেল র্যালির প্রথমে ছিলো একটি ট্রাক ও সাউন্ড সিস্টেম। ট্রাক থেকে ভেসে আসছিলো বর্ষবরণের গান। ১৫ কিলোমিটার সাইকেল র্যালিটি গুয়াখোলা, হাতিয়াড়া, বাকলি, মালিয়াট, কমলাপুর, রঘুরামপুর, দোগাছি, ঘোড়ানাছ, বেনাহাটী, বাকড়ী সহ পাশ^বর্তী ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। প্রদক্ষিণকালে বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমান বর্ষবরণ সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় সাধারণ মানুষকে বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
ব্যতিক্রমধর্মী সাইকেল র্যালি চলাকালে রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে থাকা শত শত সাধারণ মানুষের হাত নেড়ে শিক্ষার্থীদের নবর্ষের শুভেচ্ছা জানান ও উৎসাহ জানান। শিক্ষার্থীরাও সাইকেল থেকে হাত নাড়িয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে শুভেচ্ছা জানান।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী অনন্যা সিংহ সহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা নববর্ষ উৎসব একটি সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে আমরা সাইকেল র্যালি করেছি। বিভিন্ন স্থানে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ভ্রাম্যমাণ সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে। মিষ্টিমুখ করা হয়েছে। আগেও আমরা নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছি। আমাদের খুব ভালো লোগেছে।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পুষ্পিতা ভৌমিক বলেন, ‘বাঙ্গালী জীবনে খুবই একটা আনন্দের দিন হলো ১লা বৈশাখ। আমরা বাঙ্গালী। তাই বাংলা বছরকে আমরা প্রতিবছরই উৎসবমুখর পরিবেশে বরণ করে থাকি। এবছরও আমরা বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বরণ করেছি। এই অনুষ্ঠানে কোন জাতি ধর্ম ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে একসাথে দিনটা পালন করি। এই পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য আমরা সাতদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা সবার মুখে শুভ নববর্ষ লিখেছি। মাথায় ক্যাপ পরেছি। বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড, ফেষ্টুন বানিয়েছি। পাখি, মাছ, নৌকা,. পালকি, কুষক সহ বিভিন্ন ধরনের বর্ষবরণ উপকরণ তৈরি করেছি। বর্ষবরণ উদযাপন করতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজনে এলাকার মানুষ ভীষণ খুশি। স্থানীয় বাসিন্দা সাগর সেন জানান, বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাইকেল র্যালি করে ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ করে গ্রামবাসীকে নববর্ষেও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এমন ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান অন্য কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই।
সুকান্ত গে¦াস্বামী বলেন, ‘ গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। বর্ষবরণেও তারা সাইকেল নিয়ে ১১টি গ্রামে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমরা আশা করি আগামীতেও এ ধরণের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিখ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা সাইকেল র্যালি সহকারে এখারো খানের প্রত্যেকটি গ্রামে গিয়েছি এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দিয়েছি। যদি আমরা হেটে যেতাম তাহলে ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ বা নববর্ষের শুভেচ্ছা পৌছে দেয়া সম্ভব হতো না। এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ৬/৭ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। সে কারনে আমরা সাইকেল র্যঅলি করেছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলীদের পরামর্শ নিয়ে এ বছর সাইকেল র্যালির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গান ও নৃত্য পরিবেশন করে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়া নিয়েছি। এসময় সাধারণ মানুষকে মিষ্টিমুখ করা হয়েছে। আগামীতেও ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে বলে আশা করি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রদান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, সহকারী শিক্ষক তাপস পাঠক সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। এর আগেও বিদ্যালয়টি ব্যতিক্রমধর্মী নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে।
এফআর/অননিউজ