১০ ডিসেম্বর দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নড়াইল মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিনব্যাপী জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এবং চিত্রা থিয়েটার নড়াইলের আয়োজনে কর্মসূচির মধ্যে ছিলো জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন, র্যালী ,মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বদ্ধভূমি, গণকবর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ বিশেষ মোনাজাত, আলোচনা সভা, এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার ( মুক্তিযুদ্ধের মহড়া )এবং জারী গানের আসর।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে গণকবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল, ৭১এর বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার পক্ষে, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ড কাউন্সিল, নড়াইল প্রেসক্লাব, পানি উন্নয়ন বোর্ড. গনপূর্ত বিভাগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চিত্রা থিয়েটারসহ সরকারি-বে-সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এ উপলক্ষে রূপগঞ্জ থেকে একটি র্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগেসাংস্কৃতিক সংগঠন চিত্রা থিয়েটারের আয়োজনে নড়াইল মুক্ত দিবস এর উপর মুক্তিযুদ্ধের এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার (মুক্তিযুদ্ধের মহড়া) অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ফকরুল হাসান, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কবির প্রমুখ। কর্মসূচিতে বীরমু্িকতযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবি, সাংস্কৃতিক কর্মিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইলের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্তদিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে নড়াইলকে মুক্ত করেন।
ওই দিনই পানি শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত ৪০ জন পাক মিলিটারিকে আতœসমর্পনের নির্দেশ দিলে তারা আতœসমর্পনে অস্বীকৃতি জানান। এসময় মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চতুদিক থেকে প্রচন্ড গোলাবর্ষন শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আতœসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এখানে একজন পাক মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। শীতের রাতে প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারা রাত শহরে বিজয় উল¬াস করতে থাকে ও জয় বাংলা শে¬াগানে শহর প্রকম্পিত করে তোলে এবং ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষনা করে। সেদিন উল্লাসিত জনতা ঘর ছেড়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়েন। আনন্দ উল্লাসে উড়িয়ে দেন লাল-সবুজের পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলে ৫ জন খেতাব প্রাপ্ত হন তারা হলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, বীর উত্তম মুজিবুর রহমান, বীর বিক্রম আফজাল হোসেন, বীর প্রতীক খোরশেদ আলম, ও বীর প্রতীক মতিয়ার রহমান। পরে ১৪ ডিসেম্বর এ সেক্টরে মেজর মঞ্জুর নড়াইলে আসে এবং মুক্তি পাগল হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডাকবাংলো প্রঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলণ করা হয়।