কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রতিবাদে শ্লোগান দিয়ে ঝটিকা মিছিল ও মশাল মিছিলে জড়িত থাকায় স্কুল ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান হোসেনকে (১৬) আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা অপ-প্রচারের অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন নাঙ্গলকোট থানার ওসি এ কে ফজলুল হক।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করে পুলিশের মনোবল নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। এবং যে কেউ অন্যায় এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করুক না কেন তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যদি কোন শিশু বা ১৮ বছরের নিচে কোন ছেলে অপরাধ করে থাকুক না কেন তার অপরাধতো অপরাধই। তাকে ওই আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরটি বাবা ইসহাক আমার নিকট ছেলের প্রবেশপত্র নিয়ে আসার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা বাবা আমার কাছে আসেনি। আমরা ১৭ নভেম্বর রাতে কিশোর এমরানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করি। অথচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার কিশোরের নামে ১৯ নভেম্বর প্রবেশপত্র ইস্যু করে।
আমরা এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি। কিশোর ইমরান ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে। তার বাবাসহ পুরো পরিবার আওয়ামীলীগের সক্রিয়কর্মী হিসেবে এলাকায় রাজনীতি করছে। কিশোর ইমরান ঢালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী। গত প্রায় ১ বছরে ১শ ৪০দিনের মধ্যে সে মাত্র ৫০দিন ক্লাশ করেছে। সে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তও বিদ্যালয়ে ক্লাশ করতো না। ইমরান এলাকায় কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে তার অবাধ মেলামেশা ছিল।
সরকারি বিরোধী ঝটিকা মিছিলগুলোতে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামালসহ যারা এখানকার নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছিল। তারা এ কাজে অর্থায়ন করছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ছোট-ছোট ছেলে যারা আছে তাদেরকে খারাপ কাজে লিপ্ত করে বিপদে ফেলে দেওয়ার অবস্থা সৃষ্টি করছে।
তিনি আরো জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রতিবাদে গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টারদিকে উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের চিলপাড়া-উরকুটি রাস্তার মন্তলী ব্রিজের পাশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ৫০-৬০ জন সরকার বিরোধী শ্লোগান দিয়ে ঝটিকা মিছিল ও মশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল থেকে সিফাত (২০) নামে একজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত সিফাতের স্বীকারোক্তিতে সে একধিক ব্যাক্তির নাম ঠিকানা বলেন। তার মধ্যে থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে রাকিব। সে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ড্রাইভার। রাকিব স্বীকার করেছে তার সিএনজিচালিত অটোরিক্সা করে ইমরান, ইয়াছিন, শান্ত, বাদশাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পরে তারা মিছিল করার পর রাকিকের সিএনজি চালিত অটোরিক্সা করে আবার নিয়ে আসে। রাকিবের তথ্য মতে এবং তার দেখা মতে ইয়াছিনকে তার বাড়ি থেকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এবং ইয়াছিনের সাথে ইমরানও ছিল। তাদের দেওয়া তথ্য মতে শান্ত ও বাদশার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করলেও তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এঘটনায় ৬জনসহ অনেকে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে।
পুলিশ এ ঘটনায় বাদি হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের নামীয় ২৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।