রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি অ্যপার্টমেন্ট থেকে জাপান প্রবাসীর অর্ধগলিত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম আরিফুর রহমান। তার লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে।
চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘একজন রেপিস্ট ও ব্ল্যাকমেইলারকে খুন করে শান্তি নিলাম।’ কিছুদিন আগে ওই যুবক এক নারীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটের উঠেছিলেন বলে জানা যায়। আরিফুরের বাড়ি নরসিংদী।
শনিবার (১ জুন) রাতে ভাটারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাট মাটি প্রপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশি–বিদেশি নাগরিকদের অনলাইনে স্টুডিও ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকে।
গত ১৭ মে আরিফুল ইসলাম ও পারভীন আক্তার স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। অনলাইনে সাত দিনের জন্য বুকিং দিয়েছিলেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যার দিকে মাটি প্রপার্টিজ থেকে ফোন কল করে ভাটারা থানা-পুলিশকে জানানো হয়, দোতলার ফ্ল্যাটে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় লাশটি পচা–গলা। এ কারণে উদ্ধার করতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। সিআইডি ক্রাইমসিন পর্যবেক্ষণ করে জানায়, লাশের বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আরিফুল ইসলাম এক বছর ধরে জাপানে বসবাস করছেন। জাপানে আয়েশা (জাপানি নাম নাচুকি) নামে এক তরুণীর সঙ্গে গত বছর আরিফুলের বিয়ে হয়। তার স্ত্রী জাপানেই আছেন। আরিফ দেশে এসেছে সেটি পরিবার জানত না। লাশ উদ্ধারের পর তারা জানতে পেরেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ গোপনে দেশে আসেন। এরপর পুরোনো বান্ধবী পারভিন আক্তারকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তা ধরা পড়েছে। পারভীন আক্তারেরও স্বামী রয়েছে। তার স্বামী কানাডা প্রবাসী। পারভীন নিজেও কানাডার নাগরিক। দীর্ঘদিনের কোনো ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
মূলত লাশের পাশে পাওয়া চিরকুটের ভাষা থেকেই এমন ধারণা করছে পুলিশ। চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই Rapist, Blackmailler। সে তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে Rapist, Blackmailler কে মেরে শান্তি নিলাম।’
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর পারভীন হয়তো পালিয়ে গেছেন। তার সর্বশেষ অবস্থান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পাওয়া গেছে। সুতরাং তিনি হয়তো দেশের বাইরে চলে গেছেন।
এদিকে আরিফের পরিবার জানিয়েছে, শনিবার আরিফের জাপানি স্ত্রী ফোন কল দিয়ে বলেন, আরিফ দেশে এসেছেন। কিন্তু তার কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না, ফোনে কয়েক দিন ধরে কথা বলতে পারছি না।
মাটি প্রপার্টিজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ১৭ মে বিকেল ৪টার দিকে পারভীন ও আরিফুল ইসলাম একসঙ্গে এই ফ্ল্যাটে ওঠেন। ১৮ মে সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন আক্তার একাই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান। তার মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ধারণা করা হচ্ছে চিরকুটটি পারভীন আক্তারেরই লেখা।
এ ছাড়া লাশের পাশ থেকে একটি নোটারি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, আরিফ এবং পারভীন ২০২১ সালে নোটারি পাবলিক করে বিয়ে করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, লাশ উদ্ধারের পর সিআইডি ক্রাইমসিন আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24