নড়াইলের কালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘুষের লেনদেনের
প্রতিবাদ করায় পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য ও বাজার বণিক সমিতির এক
নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
গ্রেফতারকৃত পুরুলিয়া ইউপির ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আনিস শেখ ও চাঁচুড়ী বাজার
বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মিল্টন মিনার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
মিছিল করেছে ব্যবসায়ী সহ এলাকার কয়েকশত নারী পুরুষ।
শনিবার বিকেলে নড়াইল-কালিয়া সড়কের চাঁচুড়ি বাজার এলাকায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন
কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির
সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান সবুজ, কালিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক
সম্পাদক নেছার উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন
বিশ্বাস, গ্রেফতারকৃত আনিস শেখের স্ত্রী রহিমা বেগম প্রমুখ। এসময় ইউনিয়
বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মোল্যা, পাঁচগ্রাম ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি
আনোয়ার মোল্যা, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মিল্টন হোসেন, উপজেলা বিএনপি নেতা ও
ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি জামিরুল ইসলামসহ শত শত নারী পুরুষ উপস্থিত
ছিলেন।
বক্তারা বলেন, নির্বাচন অফিসের লোকজনদের নিজেদের দোষ ঢাকতে আনিস ও মিল্টনের
নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আমরা
আনিস ও মিল্টনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ এখানে সমবেত হয়েছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ
করায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
তাঁদের মুক্তি না দিলে আমরা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করব। এ ব্যাপারে প্রশাসনের
আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।
মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া
ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদের কাজ কাজ চলছিল। সেখানে উপজেলার নির্বাচন
কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে কাজ করছিলেন একটি দল। ওই দলের একজনের
নাম সাকিল, তাঁর মাধ্যমে ভোটার হতে আসা সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি
করে ঘুষ নিচ্ছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এসময় পরিষদে অবস্থানরত ইউপি সদস্য
আনিস ও ব্যবসায়ী মিল্টন এ কাজে বাঁধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে যাদের কাছ থেকে
টাকা নিয়েছিল তাঁদের একজনকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সাকিল ও নির্বাচন
কর্মকর্তা। টাকা ফেরত দেওয়ার ভিডিও একটি ফুটেজে ফেসবুকে ঘুরছে। অথচ ওইদিন
এখান থেকে কালিয়া থানায় গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মিথ্যা
মামলা করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতেই ইউপি সদস্য আনিস ও ব্যবসায়ী
মিল্টনকে রাতে করে পুলিশ। বর্তমানে তারা দুজন জেল হাজতে রয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে কালিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাতুল
ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁর
নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল ছালেক বলেন, আমি যতটুকু জানি,
ভোটার হালনাগাদের সময় ইউপি সদস্য আনিস বারবার অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ভোটার করার
জন্য হালনাগাদকারীদের চাপ দেন। এ কাজে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাঁধা দেন।
তখন তাঁরা (ইউপি সদস্য ও তাঁর সঙ্গীরা) কোনো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হালনাগাদ
কাজে নিয়োজিত নির্বাচন অফিসের এক আউটসোর্সিং কর্মীর সঙ্গে টাকাপয়সার
লেনদেন করছে। এটা পরিকল্পিতভাবেই তাঁরা করেছে।’
কালিয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন,
‘নির্বাচন কর্মকর্তার করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পওে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগাওে প্রেরণ করে। মামলার তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে
মানববন্ধনকারীদের অভিযোগও মাথায় রাখা হচ্ছে।’