নীলফামারীতে চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ভিজিএফ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

সুভাষ বিশ্বাস, নীলফামারী।।

নীলফামারী সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৫৫ হাজার ২ শত ৩৩টি (১০ কেজি চাল) ভিজিএফের কার্ডের বিপরীতে ৫২২ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াজুল ইসলাম ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে।

গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভার্নারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) এর আওতায় ১০ কেজি করে ১৫টি ইউনিয়নে ৫৫ হাজার ২শত ৩৩টি ভিজিএফ কার্ড অসহায় দুস্থদের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও তা না করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা হয়রানি মুক্তভাবে কালো বাজারে ভিজিএফের চাল বিক্রির নীল নকশা তৈরী করে। সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগ সাজসে চেয়ারম্যান প্রতি ২০ হাজার টাকা কথিত সাংবাদিকদের দেবার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট জমা রাখেন। ভিজিফের চাল বিতরণকালে কোন সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিষদে না আসে তার জন্য সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।

গত ৭ জুলাই ভিজিএফ চাল বিতরণের সময় ৮নং পঞ্চপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে সংবাদ কর্মীরা গেলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, কথিত সাংবাদিকদের জ্বালায় আমরা অস্থির হই। এসব ধরার জন্য আমরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াজুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তার পিসির সাথে আমাদের ১৫টি ইউনিয়নের ২০ হাজার টাকা করে ৩ লক্ষ টাকা বিতরণ করবেন।

৯নং ইটাখোলা ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের সময় ইউপি সদস্য মোঃ রফিক শতাধিক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করা স্লিপ কালো বাজারিদের হাতে দিয়ে চাল উত্তোলণ করে। চেয়ারম্যানকে হেদায়েত আলী শাহ্ ফকিরকে বিব্রত কর অবস্থায় ফেলে। ৯নং ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেদায়েত আলী শাহ্ ফকির বলেন, এ কাজটি আমাকে বিপদে ফেলার জন্য করা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত আছেন। আমরা মোঃ রফিক এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব। তিনি আরো বলেন, পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আমাকে বিব্রত কর অবস্থায় ফেলতে ভুয়া কার্ড ছাপিয়ে চাল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বেশ কিছু কার্ড উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন।

৫নং টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুশরত আলী শাহ্ ফকির জানান, কিছু সাংবাদিকের জন্যে হামাক চাউল চুরি করি বেচের লাগে তা ছাড়া আমরা কেনে চাউল চুরি করমো।

১৩নং চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম রেজার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের ভিজিএফ কার্ডের কোটা না মানায় ও একাই কার্ড বিতরণ করায় সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ সদস্য ৭জন লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, মেম্বারেরা ঠিকমত কার্ড বিতরণ করেন না। বেশির ভাগ চাল কালো বাজারে বিক্রি হয়, এ কারণে কিছু জায়গায় আমি নিজেই ভিজিএফের কার্ড বিতরণ করেছি।

২নং গোড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ চাল বিতরণের করার সময় ভিজিএফ কার্ডের চাল না পেয়ে শতাধিক ভুক্তভোগি অনিয়মের অভিযোগ তোলেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

১৫নং লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নেও কালো বাজারে চাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, কথিত সাংবাদিকদের ঠেকাতে আমি প্রস্তাব করেছিলাম পিআইও কে ২০ হাজার করে সব চেয়ারম্যানরা টাকা দিয়ে একটা শৃঙ্খলা ফিরাতে কিন্তু সবাই একমত নয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম চেয়ারম্যানদের নিকট টাকা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টাকা নিয়ে ছিলাম তবে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। তবে মধ্য রাত পর্যন্ত সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ে কথিত সাংবাদিকদের মাঝে আউট সোসিং এর কর্মরত মোঃ লিয়াকত আলী ও সায়েদ ইসলামকে অর্থ বিতরণ করতে দেখা দেছে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম কোন জবাব দেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম জানান, সদর উপজেলায় চেয়ারম্যানদের চাল চুরির বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি আপনারা চেয়ারম্যানদের ধরিয়ে দিন আমি জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কী কারণে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ২০ হাজার করে টাকা নিবেন বিষয়টি আমি জানি না। তবে তিনি যদি নিয়ে থাকেন তাহলে তাকে বলব এই মুহুতে যেভাবে টাকা নিয়েছেন ঠিক সেভাবেই টাকাটা ফিরত দিবেন।

আরো দেখুনঃ