নীলফামারীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহাসমাবেশ

সুভাষ বিশ্বাস, নীলফামারী

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে নীলফামারীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) নীলফামারী জেলা পরিষদের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলার মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মিলন মেলায় পরিণত হয় সমাবেশ স্থল।

মহাসমাবেশে জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ইকবাল রশিদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল মন্ডল।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬নাম্বার সেক্টরের যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল মোহাম্মদ গোলাপ, নীলফামারী-০৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর রানা মোঃ সোহেল, কল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক যুগ্ম-মহাপরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, ৬নাম্বার সেক্টরের যুদ্ধকালীন সেকশন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ইকবাল রশিদ বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাসে অনেকগুলো দিন আছে, যা আমাদের মনে রাখতে হবে। তার মধ্যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দিয়েছিলেন। ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক-মেশিনগানের হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ দিন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ডাকই ছিলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মূল অনুপ্রেরণা।’

এসময় ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ নুরুন্নবী, ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম, সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সামসুল হক সরকার, জলঢাকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোঃ আলী হোসেন সহ জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিত থেকে সমাবেশস্থল প্রাণবন্ত করে তুলে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে সমাবেশ স্থলে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান (৭৫)। অনুষ্ঠান স্থালে এসে অভিভুত হয়ে তিনি বলেন,‘দেশ স্বাধীনের পর এই দ্বিতীয়বার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে একত্রিত হলাম। একে অপরের দেখা হলো, একে অপরের সাথে কথা বলে মনের ভাব বিনিময় করতে পারলাম। অনেক ভালো লাগছে।’

ডোমার থেকে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবী (৭৪) বলেন, ‘এখানে এসে যুদ্ধকালীন সময়ের সহযোদ্ধাদের দেখায় যুদ্ধের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ হলো। সবাইকে এক সাথে দেখা আনন্দে নিজের মনটা ভরে গেল।’

শুধু বীর যোদ্ধা হাবিবুর রহমান এবং নুর নবী নন তাদের মতো আরো অনেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে অংশ নেওয়ায় মিলন মেলা ঘটে সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছেন। এর আগে কোন সরকার প্রধান আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মাথা ঘামায় নি। বর্তমান আওয়ামী সরকার আমাদের যে সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে আর কোনো সরকারের আমলে এমন সুযোগ সুবিধা পাবো বলে আমার মনে হয় না। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাইকে ফেলে রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। তাই আমাদের মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। আমাদের বয়স হয়েছে আর কয়দিন বাঁচব তাই বাকি জীবনের সময়টুকু যেন সন্মানের সাথে কাটাতে পারি। পরিশেষে আমি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘নীলফামারী জেলা পরিষদের আয়োজনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপনের অংশ হিসেবে বর্তমান প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে এবং সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত করার প্রয়াসে এমন কর্মসূচি পালন করা হলো।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কিভাবে স্বাধীন হলো? বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতা শীর্ষক বই অন্বেষণ এর দ্বিতীয় সংস্করনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সমাবেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ইকবাল রশিদের নীলফামারীতে আগমন উপলক্ষে তাকে উক্ত অনুষ্ঠানে গর্ণ সংবর্ধনা ও সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আরো দেখুনঃ