নীলফামারীর সৈয়দপুরে চোর সন্দেহে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর গুম করা ওই লাশ সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ঠাকুরের হাটের জোতরঘু এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ক্যানেল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বালাপাড়ার মৃত. আসান আলীর ছেলে রিকশাভ্যান চালক হোসেন আলীর (৬৫) বাড়িতে শবিবার ভোর রাতে অজ্ঞাত এক চোর প্রবেশ করে। এ সময় গৃহকর্তাসহ বাড়ির লোকজন টের পেয়ে অজ্ঞাতনামা ওই চোরকে আটক করে। পরে তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসে।
এসময় তারা আটক অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে গণপিটুনী দেয়। এতে সেখানে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে সে। পরে তারা স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসককে ডেকে নেয়। সেখানে এসে ওই চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার আগেই মৃত্যু হয় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজন সেখান থেকে দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এদিকে এ ঘটনার পরেই গণপিটুনির শিকার অজ্ঞাত ব্যক্তির আহত হওয়ার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপার শুরু হয়। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে জড়িতরা গণপিটুনিতে নিহত অজ্ঞাত চোরের লাশ গুম করেছে বলে গোটা এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোআর আলম ও সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খানসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পুলিশ গুম হওয়া লাশ উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারা। এসময় হোসেন আলীর বাড়ি পাশে বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরণের জ্যাকেট, মাফলার ও জুতা উদ্ধার করে। এসব উদ্ধারের পর পুলিশ লাশ গুমের বিষয়ে নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোআর আলমের দিক নির্দেশনায় গুম করা লাশের সন্ধানে নামেন পুলিশ অফিসাররা।
পরে অনেক খোঁজাখুঁজি এবং সোর্সের খবরের ভিত্তিতে দুপুরে সৈয়দপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ঠাকুরেরহাট জোতরঘু এলাকা সংলগ্ন ডালিয়া ক্যানেলে কচুরীপানায় ঢাকা অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে চিরিরবন্দর থানা পুলিশ তাদের এলাকায় লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশটি উদ্ধার চিরিরবন্দর থানায় নিয়ে যান।
এদিকে, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বালাপাড়ার এঘটনায় রিকশাভ্যান চালক হোসেন আলী, তাঁর ছেলে তারিকুল ইসলাম, ভাতিজা সোবহান ঘটনার পর থেকে গাঢাকা দিয়েছেন। লাশ উদ্ধারের পর গ্রেফতার আতঙ্কে ওই এলাকায় বাড়িঘরে পুরুষ শুন্য হয়ে যায়। বাড়ি ঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে ঐ এলাকায়। এ নিয়ে লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা ঘটনা শুনে দেখতে এসেছি। আমরা এলাকার কেউ না। জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান বলেন, লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এদিকে চিরিরবন্দর থানা পুলিশ জানায়, এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলো হোসেন আলীর স্ত্রী তাহেরা বেগম ও তার ছোট পুত্র খায়রুল ইসলাম এবং একই এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মোখলেছুর রহমান।
থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকার লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের পরিচয় মেলেনি।