আজ ২৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা। নূর মোহাম্মদের জন্মস্থান মহিষখোলা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর করা হয়েছে।
নূর মোহাম্মদের জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার (২৬ ফেব্রæয়ারী) মোহাম্মদ নগরে সকালে কোরআনখানি হয়, স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি, রাষ্ট্রূীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচতে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান ভুইয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এড.এস এ মতিন, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে শেখ মোস্তাফা কামাল সহ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেনিপেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ।
৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রæপক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুঁড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। বর্তমানে তার ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে আছেন। গত বছর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা ইন্তেকাল করেন।
এ বীরের সম্মানার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে সরকারীভাবে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। নূর মোহাম্মদের বাড়িতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বসতভিটায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও প্রাচীর না থাকায় তা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশ্রামাগার ও টয়য়েল না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনাথীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসতবাড়িতে যাতায়াতের রাস্তাটিরও বেহাল দশা।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগরে এলাকাবাসীর প্রষ্টোয় এই বীরের নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির কল্যাণে এলাকায় নারী শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির নি¤œ মাধ্যমিক স্তর ১১ বছর পর ২০১০ সালেএমপিওভূক্ত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভূক্ত হয়নি। এছাড়া ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি চলতি বছরে এমপিও ভূক্তির পক্রিয়া চলছে।