গত ৫ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধে বিরোধে ইয়াকুব আলী (৮৩) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার মেয়ের দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় আসামীদের জামিন দেয়ায় পঞ্চগড়ে এক বিচারককে লক্ষ করে জুতা নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘটনার পর মামলার বাদী মিনারা আক্তার (২৫) নামে এক তরুণীকে আটক করে পুলিশি হেফাযতে রেখেছে আদালতের পুলিশ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার সময় পঞ্চগড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আমলী আদালত-১ এর বিচারক অলরাম কার্জীর আদালতে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটার পর আদালত এলাকাজুড়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কোর্ট পুলিশকে তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
বাদী মিনারা আক্তার সাতমেরা এলাকার ইয়াকুব আলীর মেয়ে।
স্থানীয় ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর জমি নিয়ে বিরোধে ইয়াকুব আলীর মৃত্যু হয়। ওই দিনই রাতেই মিনারা বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামী করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোমবার আসামীদের মধ্যে প্রধান আসামীসহ ৩ জন বাদে ১৬ আসামী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে। তবে নিহতের পরিবার বিচারকের উপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন টাকার বিনিময়ে বিচারক অন্যায় ভাবে আসামীদের জামিন দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভে মিনারা আদালত প্রাঙ্গনে চিৎকারসহ আর্তনাদ করলে তাকে আটক করে আদালত কোর্ট পুলিশ। নিহতের পরিবার এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন। এদিকে ঘটনার পর আদালত চত্বর এলাকা উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করলে প্রায় ১ ঘন্টা আমলী আদালত-১ এর বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
নিহতের বড় ছেলে ফারুক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আজ আমার বাবার কুলখানি। এর মাঝে তারা আমাদের দায়ের করা মামলায় জামিন নিতে আসে। আদালত বিবাদীর পক্ষ থেকে টাকা খেয়ে তাদের জামিন দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি। মিনারার বড় বোন ফাহিমা আক্তার বলেন, আমরা আমাদের বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু আদালত কিভাবে এই হত্যা মামলায় আসামীদের জামিন দিলো এটা আপনারাই বলুন। আমরা কোন ভুল করিনি। আমরা আমাদের বাবার হত্যার বিচার দাবী করছি।
মিনারার ভাবি রৌশনা বেগম অভিযোগ করে জানান, বিচার চাইতে এসে আমাদের বাদীকে উল্টো আটক করা হয়েছে। হত্যার মামলা তার পরেও আসামীদের জামিন দিয়ে উল্টো আমার ননদকে আট করেছে আদালত। আমরা হত্যার বিচারসহ মিনারার মুক্তি চাচ্ছি।
মিনারার আইনজীবি অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব বলেন, আদালত যে কোন রায় দিতে পারে, কিন্তু আমরা কখনো দেখিনি যে হত্যা মামলায় আসামীদের সরাসরি জামিন দিতে। আমরা দেখেছি বিচারক অলরাম কার্জী ৩০৭ ধারার মামলার জামিন দিতে গড়িমসি করে। ৩২৩ ধারার মামলা ক্ষেত্র বিবেচনায় হাজতে নেন। তাহলে ৩০২ ধারার মামলায় মামলায় তিনি কিভাবে জামিন দিলো। আজকে আসামীদের জামিন দিয়ে আমাদের বাদীকে কোর্ট পুলিশি হেফাযতে আটক করে রাখা হয়েছে।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট রাকিবুত তারেক বলেন, এই মামলায় যারা মূল আসামী তারা অনুপস্থিত ছিল। সম্ভবত মূল আসামী না থাকায় অন্যদের আদালত বিবেচনা করে জামিন দিয়েছে। এর মাঝে আদালতের রায় শেষে বাদী আদাত থেকে বের হওয়ার সময় বিচারকে লক্ষ করে তার পায়ের জুতা তুলে নিক্ষেপ করেন।
পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত পুলিশের পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) জামাল হোসেন বলেন, আদালতের শুনানী শেষে আদালত আসামীদের জামিন দিলে বাদী কাঠগড়ায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এসময় নারী পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে তাকে সেখান থেকে নামানোর জন্য চেষ্টা করা হয়। এদিকে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই তরুণী বিচারককে লক্ষ করে জুতা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আমরা প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনার পর আইনজীবিদের সাথে বিচারকদের আলোচনা চলছে। তবে আদালতের নির্দেশ পেলে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই তরুণী আদালতে কোর্ট পুলিশের হেফাযতে রয়েছে।
এফআর/অননিউজ