পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণার এক উঠান বৈঠকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলুকে হুমকি দিয়ে এক হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন নৌকার সমর্থক তোফাজ্জল হোসেন তোফা নামে এক ব্যক্তি।
তার এই হুমকিসহ হত্যার স্বীকারোক্তির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভিডিও বক্তব্য দেখা যায়, নৌকা মার্কার অনুসারী তোফাজ্জল হোসেন তফা তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু ও তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাটের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ায় তাদের কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালি দেন৷ একই সময় তেঁতুলিয়ার উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শ্রমিক নেতা মুক্তারুল হক মুকুকে মদখোর হিসাবে আখ্যা দিতে দেখা যায়৷
বক্তব্যে দেয়ার সময় তফা হুশিয়ারী দিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উদ্দ্যােশ করে বলেন, 'তুমি বুঝতে পারছো নাঈমুজ্জামান মুক্তা যদি এমপি হয়, তাহলে তো আমার ভগ্নিপতির সাথে তো সম্পর্ক ভাল না। আমার মামাও তো (বর্তমান সাংসদের ভাগিনা ডাবলু) বুড়া, নমিনেশন জীবনেও পাবে না। তাই ভাবছো সম্রাটের কিছু টাকা আছে সেগুলো নিয়ে শেষ কামড় দিয়ে কিছুটা ঘরে ঢুকি। তোমার ঘরে ঢুকে লাভ নাই। নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া সর্বপ্রথম তোমাকে দুদকে নিয়ে রাখবে, তোমাকে হিসাব দিতে হবে'।
আরও বলেন, শুরু থেকে তোমার শেষ, আর কয়েকটা দিন। আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি নাইবুল চেয়ারম্যানকে মার দিয়ে আমরা ঘরে ঢুকিয়েছি। নজরুল ওয়াকশপকে আমরা ডাঙ্গায় মেরে ফেলেছি। এবার তোমাকে মারবো (ডাবলু চেয়ারম্যানকে) নৌকার ভোটে। তোমার বাচন নাই (বাচার সুযোগ নাই)। এবার ভাল করবো এই শয়তানদের, লাঠির চাপে নৌকার ভোট দেয়াবো।
গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার এক উঠান বৈঠকে এ বক্তব্য দেয় তোফাজ্জল হোসেন তোফা। এদিকে ঘটনায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় জানান ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট।
প্রায় ১ যুগ আগে তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইটি পক্ষ তৈরি হয়। এর মধ্যে দলীয় অফিসকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জাতীয় শ্রমিক লীগের তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, হাফেজসহ কয়েক জন গুরুতর আহত হয়। পরে আহত হওয়ার কয়েক দিন পর অবস্থার অবনতি হলে নজরুল ইসলাম নামে ওই শ্রমিকলীগ নেতার মৃত্যু হয়। সেই নজরুল ইসলামকে মারার কথার স্বীকারোক্তি দিয়ে বক্তব্য দেন তফা নামে ওই ব্যক্তি।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে। আর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে যে যার মতো প্রচারণায় নেমেছে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি আমার বিষয়ে দলীয় প্রার্থীর অনুসারী ও সর্মথক তোফাজ্জল হোসেন তফা হুমকিসহ যে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তফা একজন কুখ্যাত চোর। আমি আশা করছি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ট্রাক মার্কার প্রচারণায় নৌকার কর্মী ও সমর্থকদের হুমকির কথা জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, তোফাজ্জল হোসেন তফা নামে যে নৌকার কর্মী ও অনুসারী আমাদের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ডাবলুকে নিয়ে কু-রুচিপূর্ণ বক্তব্য ও হুমকি দিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি কাকে যেন মেরে ফেলছেন সেই স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। আমরা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনো অভিযোগ দায়ের করতে পারি নি। তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি'তে লিখিত অভিযোগ করতে অভিযোগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এতে সাধারণ ভোটাররা উৎসাহী হবেন এবং নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহী হবেন।
এফআর/অননিউজ