পঞ্চগড়ে বিএনপি নেতা আরেফিন হত্যা মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী, দুই সাংসদ, সাবেক ডিসি, চার পুলিশ কর্মকর্তার মামলার আবেদন

ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

২০২২ সালে পঞ্চগড়ে বিএনপির কর্মসূচীতে হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিন হত্যার দুই বছর পরে সাবেক রেলমন্ত্রী, পঞ্চগড় এক আসনের সাবেক দুই সাংসদ, সাবেক ডিসি, সাবেক চার পুলিশ কর্মকর্তা সহ ১৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০০-৮০০ আসামী করে আদালতে মামলার আবেদন করেছে আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার।

মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে গণমাধ্যেমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন পঞ্চগড় আদালতের পিপি মো. আদম সুফি। এর আগে গত সোমবার (৫ মে) দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার আদালতে মামলার আবেদন করেন। পরে বিচারক এসএম শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে এজহারভূক্ত করতে সদর থানা পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, নিহত আরেফিনের বাড়ি বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের চন্দনপাড়া এলাকায়। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দ্বায়িত্বে ছিলেন। এদিকে, মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহত বিএনপি নেতা আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার।

মামলায় আসামী করা হয়েছে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিকুল ইসলাম, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস, তৎকালীন সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা, আওয়ামীলীগ সরকারের রেলপথ মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম সুজন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান ও নাঈমুজ্জামান মুক্তা, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন, পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকিয়া খাতুন, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখসহ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ মোট ১৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০০/৮০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। এ সময় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতা ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশের চার কর্মকর্তার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও ইন্ধনে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় সময় বিএনপি নেতা আরেফিনের উপর হামলা ও তাকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে দলের অন্য নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা। ঘটনার পর থেকেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল আরেফিনের পরিবার।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি আব্দুল ওহাব আনসারী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তৎকালীন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় এতদিন মামলা করতে পারেননি বাদী। তবে বর্তমানে নিরপেক্ষ অবস্থান থাকায় মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা আশা করি, দ্রুত আসামীরা গ্রেপ্তার হবেন এবং আমরা বিচারের মাধ্যেমে ন্যায় বিচার পাবো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় আদালতের পিপি মো. আদম সুফি বলেন, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলা বিএনপির অফিস থেকে একটি বিক্ষোভের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বাহিনীর সাথে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু লোকজন সে মিছিলকে বাঁধাগ্রস্ত করে। ফলে একটি সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এবং সেখানে অনেক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। তার মধ্যে আরেফিন শহীদ হন। উনার স্ত্রী বিজ্ঞ আদালতে এসে মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত পূর্বক এজাহার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

আরো দেখুনঃ