পঞ্চগড়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের হামলা, মারধরের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে। গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহীন আলম আশিক। মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরো ৭০ থেকে ৮০ জনকে। বাদী আশিকের বাড়ি সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের যুগিভিটা এলাকায়। তিনি ওই এলাকার আবু আলম মুহাম্মদ আব্দুল হাই হেলালের ছেলে। পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, পঞ্চগড় এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, এক আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা, সহসভাপতি আবু তোয়বুর রহমান, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপেন চন্দ্র রায়, সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন, পঞ্চগড় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, পঞ্চগড় পৌর যুবলীগের সভাপতি ও ৫নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর হাসানাত মো হামিদুর রহমান, পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আল তারিক, সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ূন কবীর উজ্জ্বল, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুফিয়ার মাস্টার, জুলফিকার আলী, সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিষ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশে লগি বৈঠা, রামদা, ধারারো ছড়া, লোহার রড, বাঁশের লাঠি সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পঞ্চগড়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- চালায়। ওইদিন জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ঠেকর পাড়া বাজার থেকে যোগ দিতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের শহরের জালাসী এলাকায় পথরোধ করা হয়। পরে পঞ্চগড় এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধানের নেতৃত্বে অস্ত্র সহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়। এতে মাথা, ঘাড়, হাত, পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারারো ছড়া সহ দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ও বেধরক মারধরে গুরুতর আহত হন মামলার বাদীর বাবা আবু আলম মুহাম্মদ আব্দুল হাই হেলাল (৬৮), ভাই এহসানুল আলম বাদশা (৩০), এমরানুল আলম স¤্রাট (৩৩) সহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। পরে তাদের বাঁচাতে অন্যরা এগিয়ে এলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেন। অনেকে রংপুর সহ ঢাকায় উন্নত চিকিৎসাও গ্রহণ করেন। তবে রাজনৈতিক কারণে আইনগত ব্যবস্থায় না যেতে পারায় দীর্ঘদিন পরে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলছেন মামলার বাদী।
মামলার বাদী ও পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহীন আলম আশিক বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠার ঘটনা ছিল নারকীয়। পৃথিবী জুড়ে এরকম হত্যাকান্ড আর কোথাও ঘটেনি। সেদিন শেখ হাসিনার নির্দেশে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা পঞ্চগড়ে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে গুরুতর আহত ও জখম করে। ওইদিন আমার বাবা, দুই ভাই সহ অনেকে গুরুতর আহত হন। দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের কারণে ন্যায় বিচার ও সুশাসনের পরিবেশ ছিলনা। তাই দীর্ঘদিন পরে মামলাটি দায়ের করেছি। আমি আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, গত শুক্রবার রাতে শাহীন আলম আশিক নামে এক ব্যাক্তি বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
একে/অননিউজ24