পঞ্চগড়ে সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করায় তোপের মুখে সারজিস আলম

ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে বিএনপি’র এক নেতার তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে জেলার আটোয়ারী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় সারজিস আলম সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে বের হলে বিএনপির নেতা মতিউর রহমানের তোপের মুখে পড়েন তিনি।

এদিকে এ সংক্রান্ত ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মতিউর রহমান আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে উপজেলার অন্যান্য সরকারি দপ্তরের প্রধানদের ডাকেন। পরে তিনি ইউএনওর সম্মেলনকক্ষে তাঁদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। তবে সেখানে ইউএনও উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে বের হওয়ার পরপরই ওই বিএনপি নেতার সঙ্গে সারজিস আলমের বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সারজিস আলম বলছেন, ‘আমি তাঁদের কাছে জানতে চাই, আমার সুযোগ আছে আটোয়ারীর মানুষের জন্য কিছু করার, তাঁদের কোন কোন জায়গায় প্রয়োজন, এটা আমি তাঁদের কাছে জানতে চেয়ে তাঁরা যদি সমস্যাগুলো বলে, আমি যদি আটোয়ারীর জন্য কোনো কিছু বের করে আনতে পারি, এটা ভালো না খারাপ?’ এ সময় মতিউর রহমান বলেন, ‘তো তাহলে এটা ডিসি সাহেবের মাধ্যমে হোক, ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে হোক।’

জবাবে সারজিস আলম বলেন, ‘তাঁদের আমি আহ্বান জানিয়েছি যে আমার সুযোগ আছে।’ এ সময় মতিউর রহমান বলছেন, ‘আমার জিজ্ঞাসাটা হচ্ছে, এটা কি তাঁরা পারেন এ ধরনের মিটিং করতে, আমি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই।’ তখন সারজিস আলম বলছেন, ‘আমি যদি কী কী দরকার এটা তাঁদের কাছে জেনে নিয়ে আসি, এটা হওয়া উচিত কি না। এটা তো কোনো অফিশিয়াল মিটিং নয়।’

একপর্যায়ে মতিউর রহমান বলছেন, ‘বাবা, এটা কিন্তু তোমরা রাজনৈতিক দল এনসিপি হওয়ার আগে ঠিক ছিল। তখন কিন্তু আমরা মেলায় (আলোয়াখোয়া রাশ মেলা) সহযোগিতাও করেছিলাম। যেহেতু রাজনৈতিক দল এখন।’ এ সময় সারজিস আলম বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব হিসেবে যদি পারেন, একটা দলের পদধারী হয়ে, তিনি এখন এমপিও না, মন্ত্রীও না, উনি পারে কি না? উনি যদি পারেন, আমিও একটা দলের হয়ে পারি।’ এ সময় মতিউর রহমান বলেন, ‘কিন্তু উনি কোনো কনফারেন্স রুমে মিটিং করেন না।’ এ সময় সারজিস আলম বলেন, ‘এটা কোনো অফিশিয়াল মিটিং না।’

ভিডিওতে মতিউর রহমানকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘আমি উনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই তাঁরা কোন বিধানে এসেছেন। একটা রাজনৈতিক দলে মুখ্য সংগঠকের সঙ্গে তাঁরা সরকারি কর্মকর্তারা কোনো মিটিং করতে পারেন কি না। তাঁরা এটা পারেন না। এটা কোন আইনে এসেছেন একজন নাগরিক হিসেবে এটা জানতে চাই।’ তখন সারজিস আলম বলেন, ‘কে বলছে পারে না।’ এ সময় সারজিস আলম মতিউর রহমানকে একাধিকবার বলতে থাকেন, ‘টোন লো করে (গলার স্বর নামিয়ে) কথা বলেন।’ এরপর সারজিস বলেন, ‘আপনি যে আইনে এটা জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমিও একজন নাগরিক হিসেবে আটোয়ারীতে কী কী সমস্যা আমি তাঁদের কাছে জানতে চাইতে পারি।’

আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মতিউর রহমান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের ঈদ শুভেচ্ছার কার্ড দিতে উপজেলা পরিষদের কয়েকটি সরকারি দপ্তরে গিয়েছিলাম। এ সময় কাউকেই না পেয়ে জানতে পারি তাঁরা ইউএনও অফিসের সম্মেলনকক্ষে সারজিস আলমের সঙ্গে মিটিং করছেন। এ নিয়ে উপজেলার দায়িত্বে থাকা বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোনে জানালে তিনি সেখানে উপস্থিত না থাকায় কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে বিষয়টি পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছিলেন। পরে সারজিস আলমের সঙ্গে অন্য কর্মকর্তারা বেরিয়ে এলে আমি তাঁদের কাছে জানতে চাই যে তাঁরা অফিস সময়ে এ ধরনের মিটিংয়ে আসতে পারেন কি না। এ সময় সারজিস আলম এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এটা কোনো বিধানে নেই বলে তাঁদের জানিয়ে দিই।

তবে সারজিস আলম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমাদের আটোয়ারী উপজেলাটা খুবই পিছিয়ে পড়া একটা উপজেলা। এখানে পাঁচটি সরকারি অফিসের প্রধান নেই। আমি মূলত ওই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে সমস্যার কথা জানতে সেখানে গিয়েছিলাম।

আরো দেখুনঃ