আগামী ২৮ নভেম্বার পঞ্চগড় সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) সাতমেরা ইউনিয়নে প্রিয় নেতাকে দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতিক না দেয়ায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোটারসহ ইউনিয়নবাসী। এসময় প্রায় কয়েক হাজার ভোটার ও সমর্থক বিক্ষোভও করে।
গত রোববার (২৪ অক্টোবর) রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার দশমাইল বালিকা দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাতমেরা ইউনিয়নবাসী। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের খবর পাওয়া মাত্রই ইউনিয়নবাসীর পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো স্কুলমাঠ। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কয়েক হাজার ইউনিয়নবাসীসহ ভোটারেরা। তাদের দাবী নৌকা প্রতিকে নির্বাচীত প্রার্থীকে বাদদিয়ে জনসমর্থীত প্রার্থীকেই যেন পুনরায় মনোনয়ন দেয়া হয়।
জানা যায়, জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের জোতহাসনা গ্রামের বাসিন্দা মরহুম খবির উদ্দীন। এলাকাবাসী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই প্রিয় ছিলেন খবির উদ্দীন। বাবার সেই আদর্শে বাবার দেখানো পথে চলা শুরু করে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তারই সন্তান রবিউল ইসলাম রবি।
বিভিন্ন সমস্যায় সরকারি ভাবে না হলেও নিজ উদ্দোগ্যে ইউনিয়নবাসীর পাশে দারিয়েছে রবি। ইউনিয়নবাসীর বিশ্বাস ছিলো এবারের ইউপি নির্বাচনে রবিউল ইসলাম রবিকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে তার পুরো উল্টাটা হয়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে এলাকাবাসীর বিপুল পরিমাণ সমর্থন পেলেও আওয়ামীলীগের নৌকার মনোনয় দেয়া হয় নি রবিকে। সব সময় ইউনিয়নবাসী রবির পাশে ছিলো। তাই প্রিয় নেতা ও চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী সাতমেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবিকে পুনরায় বিবেচনা করে নৌকার মনোনয় দেয়ার জোর দাবী জানান বক্তারা।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, সাতমেরা ইউনিয়নে ফজলুল হক নামে যাকে নৌকার মনোনয় দেয়া হয়েছে তাকে ইউনিয়নবাসী ঠিকমতো চিনেন-ই না। তার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই সরকারি গোয়েন্দার মাধ্যমে সঠিক তদন্ত করে রবিউল ইসলাম রবিকে নৌকা প্রতিকে দেখতে চাই। এসময় কয়েক হাজার সমর্থকের ভালোবাসা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রবি।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা না দেখেই আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয় নি। আমার অন্য কোন প্রতিকে নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। আমাক যেন অন্যকোন প্রতিকে নির্বাচন করতে না হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এনএসআই, ডিএসবির বা সরেজমিনে তদন্ত করান আমি যদি সাতমেরার যোগ্য প্রার্থী হয়ে থাকি, আমার পক্ষে যদি ভোটার ও ইউনিয়নবাসীরা থাকে তবে কেন আমাকে নৌকার মনোনয় দেয়া হলো না।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ, আপনার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি আমি অন্যকোন প্রতিকে ভোট করলে আমার বাবার আত্মা কবরেও শান্তি পাবে না। আমি এটাই চিন্তা করি যে আমার বাবা আওয়ামীলীগ দল করতে করতে জীবনটা দিলো হেলিপেডে সেই আত্মাটাকে আমি অন্যপ্রতিক নিয়ে কষ্ট দিতে চাই না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয়দের ও ইউনিয়নবাসীর ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি তিনদিন ধরে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, আমি কাউকে কিছু বলতে পারছি না। হয়তো একদিন সমর্থকদের চাপে সতন্ত্র ভাবে ভোটের মাঠে নামতে হবে। তখন আমার নাম পড়বে বিদ্রোহী প্রার্থী। আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে শেষ বারের মতো অনুরোধ ত্রিণমূলের রিপোর্ট নিয়ে যাচাই বাছাই করে আমার ইউনিয়নবাসীর জন্য প্রতিকটি ভিক্ষা চাচ্ছি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাতমেরা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জমিরুল ইসলাম, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জামিল আখতার, ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের মোজাম্মেল হক, দশমাইল বালিকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদ প্রধান, জুয়েল হক, আব্দুল জলিল, আজিরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান খোরশেদ আলম সহ ইউনিয়নবাসী ও ভোটারেরা।
জানা যায়, তৃতীয় ধাপে ১০০৭টি ইউপি এবং ৯টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী উপজেলায় আগামী ২৮ নভেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর এসব ইউপি এবং পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24