গত রোববার (২ জুন) সকালে সদর উপজেলার মনতলা এলাকার ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে সুতিয়া নদীর সেতুর নিচে থেকে দ্বিখণ্ডিত একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে পুরো এলাকায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় লাশের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। ওই দ্বিখণ্ডিত মরদেহটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ওমর ফারুক সৌরভের। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে। এ ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, আপন চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভাকে বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধে সৌরভকে খুন করা হয়েছে। এর পেছনে সৌরভের আপন চাচা ও ইভার বাবা ইলিয়াস আলী জড়িত বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম চলছিল তার চাচাত বোন ইভার। উভয়ই পরিবারকে না জানিয়ে ১২ মে ঢাকার একটি বাসায় বিয়ে করেন। এর পর ইভা ময়মনসিংহের নিজ বাসায় চলে আসেন। তাদের বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হতেই উভয় পরিবারের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ১৬ মে ইভাকে জোর করে কানাডা পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। এর মধ্যেই ইভার বাবা ইলিয়াস আলী আপন বড় ভাই সৌরভের বাবা ইউসুফ আলীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। ইভা ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে।
বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলে থাকতেন সৌরভ। রাজধানীর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী চাকরি করেন ডাক বিভাগে। মা মাহমুদা আক্তার পারুল গৃহিণী।
পরিবারের অভিযোগ, ইভার সঙ্গে সৌরভের প্রেম ও বিয়ে মেনে নিতে পারেননি চাচা ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ হয়ে সৌরভকে ময়মনসিংহ শহরের গোহাইলকান্দি এলাকায় নিজ ভাড়া বাসায় ডেকে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করেন তিনি। রোববার রাতে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী।
এ সময় ইউসুফ আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সে-ই আমার সন্তানকে হত্যা করল! তার কী এমন দোষ ছিল? শুধু কি আমার ছেলেই তোর (ইলিয়াস) মেয়েকে ভালোবেসেছে? তোর মেয়ে কি ভালোবাসে নাই? যদি তোর মেয়ে ভালো নাই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল?’
ইউসুফ আলী আরও বলেন, ‘আমার ছেলে আমার একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছে। আমরা যদি জানতাম, সে ময়মনসিংহে যাবে; কোনোদিন যেতে দিতাম না। সৌরভের বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে আমার ছোট ভাই আমাকে নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। আমি এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সৌরভের মা মাহমুদা আক্তার। তিনিও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ভালোবেসে চাচাতো বোনকে বিয়ে করাই আমার ছেলের কাল হয়েছে। আমরা কোনোদিন ভাবিনি– আপন চাচা তার ভাতিজাকে এভাবে হত্যা করবে! ইলিয়াস সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।’
তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল থেকে সুতিয়া নদীর যেখান থেকে সৌরভের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার পাশেই রক্তে ভেজা বালিশ, জানালার পর্দা, কাঁথা, স্কচটেপ, গ্লাভসসহ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। যা বিশ্লেষণ করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, সৌরভকে হত্যার পর খুনি ধারালো যন্ত্র দিয়ে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে। লাশের পরিচয় যেন কেউ শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য মাথা বিচ্ছিন্ন করে সেটা আলাদাভাবে গুমের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া পরিচয় লুকাতে খুনি লাশের দুই হাতের আঙুলের চামড়া তুলে ফেলেছিল।
ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটিত হবে।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24