নীলফামারী কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে সময়মতো কৃষক জমিতে বোরো ধানের সেচ দিতে না পারায় শত বিঘা জমির রোপণকৃত ধান গাছ পুড়ে গেছে ও ধানে চিটার পড়েছে । জমির ক্ষতি দেখে কৃষকের হৃদ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার মতো ঘটনা ঘটেছে,নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচণ্ডী ইউনিয়নের কিসামত ব্যাঙপাড়া ডাঙ্গা গ্রামে ।
কৃষকের অভিযোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বজ্রপাতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ট্রান্সফর্মার এর ফেস পুড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ এ অভিযোগ জানালে লাইনম্যান এসে ট্রান্সফর্মার ঠিক করার জন্য ট্রান্সফরমারটি খুলে নিয়ে যায় । এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও ট্রান্সফরমার ফেরত না পাওয়ায় কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ এর এ জিএম মোঃ জিয়াউল ইসলাম বরাবর অভিযোগ দিলে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জম হোসেনের নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চার হাজার টাকা জরিমানা করে, জরিমানার টাকা পরিশোধ হলে ও দশ থেকে বারো দিন পার হলেও কোন বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি, এই সময়ের মধ্যে জমিতে সেচের পানি না থাকায় রোপণকৃত বোরো ধানের গাছ পুড়ে গেছে ও ধানে চিটা ধরেছে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী রনচন্ডী ইউনিয়নের কিশামত ব্যাঙপাড়া ডাঙ্গায় ৬০/৭০ জন প্রান্তিক কৃষক। প্রায় শত বিঘা জমি রয়েছে।প্রতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সেচ পাম্পের পয়েন্ট থেকে কমানডিং এরিয়ার মধ্যে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া হয়। ব্যাঙপাড়ার বিঞ্চু রায় কিশোরগঞ্জ বিএডিসি থেকে ৫ হর্স পাওয়ার অগভীর সেচ পাম্প ২০২০ সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে উক্ত পাম্প টি পরিচালনা করে আসছে। জমিতে আরো কমপক্ষে মাস দুয়েক সেচের প্রয়োজন, এমন সময় ২ এপ্রিল/২২ দিবাগত রাতে আকষ্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ট্রান্সফরমারের ফেস পুড়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতের জুনিয়র অফিসার আতিকুল ইসলাম আতিক ট্রান্সফরমারটি ঠিক করতে হবে বলে খুলে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন এ ট্রান্সমিটার ফিরে না পেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম বরাবর আবেদন করেন কৃষকেরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা আতিকুল ইসলাম আতিক ট্রান্সফরমার কোথায় নিয়ে গেছেন কৃষকরা জানতে চাইলে, তিনি জানান, চাঁদের দেশে আছে। চাঁদের দেশ থেকে ট্রান্সফরমার আসলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। এসব উদ্ভট প্রত্যারণামুলক কথাবার্তা ও বিদ্যুৎ -এর অভাবে সেচকাজ ব্যাহত হওয়ায় এতে ওই গ্রামের শত বিঘা জমির ধান গাছ পুড়ে ও ধানে চিটা হয়ে গেছে।
যেখানে জমিগুলোয় বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান পাওয়ার কথা, অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ধানের অবস্থা দেখে ললিত চন্দ্র রায় নামে এক কৃষক মাঠেই স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ব্যাঙপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রবি রাম রায়, হুলামিন, মমিনুর, তালেব মিয়া বলেন, গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর প্রত্যেকেই ৩/৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। পল্লী বিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেচের অভাবে আমাদের জমির সম্পূর্ণ ধান নষ্ট হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অসৎ কর্মকর্তার বিচার দাবি করছি।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সচেন রায় ও হরিসংকর রায় বলেন, এ সেচ প্রকল্পের আওতায় আমাদের প্রায় শত বিঘা জমি রয়েছে। সেচের অভাবে জমির ধানগুলো নষ্ট হওয়ায় আমি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। প্রতি বছর এ জমিগুলোয় বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান পেতাম, এবার সেখানে মাত্র তিন-চার মণ ধান পাব হয়তো। শুধু পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতির কারণেই আজ আমাদের এ দুর্দশায় পড়তে হয়েছে। কে দিবে এই ক্ষতিপূরণ।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সচেন রায় ও হরিসংকর রায় বলেন, এ সেচ প্রকল্পের আওতায় আমাদের প্রায় শত বিঘা জমি রয়েছে। সেচের অভাবে জমির ধানগুলো নষ্ট হওয়ায় আমি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। প্রতি বছর এ জমিগুলোয় দুই থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধান আপাতত পেতাম, এবার সেখানে মাত্র তিন-চার শ মণ ধান পাব হয়তো।
ঢেপারহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ইনচার্জ আতিকুর রহমান আতিক- ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন চাঁদের দেশ থেকে ট্রান্সফরমার আসলে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে এই কথাটি আমি ইয়ার্কি করে বলেছি এ বিষয়টি এত বড় আকার ধারণ করবে আমি বুঝতে পারি নাই ।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম জিয়ারুল ইসলাম জিয়া জানান, বিঞ্চু রায় এই বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে । অফিসের নিয়মের বাইরে আমরা কিছুই করতে পারিনা ।