বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে, দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘সৌজন্য মতবিনিময়কালে’ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া ইসির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।
নিয়োগের একদিন পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন তারা। ওই কমিশনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনটি বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করে। ভোট শেষে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।
সরকারের পতনের পর প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলোপ করে নতুন কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে পদত্যাগ করার ইঙ্গিত দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবন থেকে বের হওয়ার সময় পদত্যাগের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কিছুই বলব না। বৃহস্পতিবার ১২টায় আপনাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, যা বলার সেখানে বলব।’
বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণার সময় সিইসি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। ওই নির্বাচন দলের সঙ্গে নয়, ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীনে। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধীদল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।
সদ্য বিদায়ী সিইসি বলেন, কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেয়ার মত কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সেই কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কখন কী কারণে কতদিনের জন্য স্থগিত করা যাবে তাও সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। অতীতে কখনই কোনো কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেননি। সম্প্রতি ভেঙে দেয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে। দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে ১,৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সকল দোষ বা দায়-দায়িত্ব সকল সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সকল সময় সকল কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।
নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন মন্তব্য করে সিইসি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। আর নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে না সাজালে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন করার পরামর্শ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সূত্রঃ ঢাকা মেইল
একে/অননিউজ24