পাবনার আতঙ্কের জনপদে নির্বাচনী আমেজ; সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা।।

পাবনার আতঙ্কের জনপদ হিসেবে পরিচিত ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ জুন। নির্বাচনী সহিংসতা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম হত্যার ঘটনায় এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে আতংক উৎকণ্ঠা এলাকার মানুষের মাঝে নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ হওয়া নিয়ে।

প্রায় ছয় মাস নির্বাচন বন্ধ থাকার পর আবারো নির্বাচনী আমেজ ইউনিয়ন জুড়ে। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ন নির্বাচন। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ।

সুত্র মতে, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। কিন্তু তার আগে, ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয় আনারস প্রতিকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম। হত্যাকান্ডের ঘটনার পর দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় অনেকে। ফলে, ১৯ ডিসেম্বর ভাড়ারা ইউপি নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

প্রায় ছয় মাস পর আগামী ১৫ জুন পুনরায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আলোচিত ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। আতংকের জনপদে শান্তি ফেরাতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে, নির্বাচন ঘিরে আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকাবাসী। প্রার্থীরা একে অপরের দিকে ছুঁড়ছেন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।

ঘোড়া প্রতিকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালই ছিল। পুলিশ প্রশাসনও ব্যাপক তৎপর রয়েছে। কিন্তু গত ৭ জুন রাত থেকে অস্ত্রসহ চরমপন্থিরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগ মনোনিত সাইদ চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করছে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। দেখা যাক তারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ইউনিয়নে আমার তিনটি নির্বাচনী অফিস রয়েছে। অথচ নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনীর অফিসের সীমা নাই। এখন পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে ৮৫টি নির্বাচনী অফিস করেছে। সেগুলো দেখার কেউ নাই। অথচ আমি প্রচারণায় গেলে লোক বেশি হলেই আমার ওপর অভিযোগ করা হয়। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে জানে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মানুষের মাঝে আতংক তৈরী করছে। এ কারণে সুষ্ঠ ভোট নিয়ে শঙ্কা আছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আবু সাইদ খান বলেন, এসব অমুলক অভিযোগ, কোনো ভিত্তি নেই। কারণ পাবনায় একটিমাত্র ইউপিতে নির্বাচন। সবার নজর এদিকে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত লোকবল দিয়ে কঠোর নজরদারির মধ্যে প্রচারণা করছি আমরা। ভোট একটি নাগরিক অধিকার, সকল ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে যাকে ভাল লাগে তাকে ভোট দিবে মানুষ। ১৫ জুন সুষ্ঠু ভোট হবে এবং আমি শতভাগ জয়ী হবো বলে বিশ^াস করি। স্বতন্ত্র প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন সম্পূর্ন অনৈতিক ও বিভ্রান্তিমুলক। বরং তার লোকজনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহিলাদের উপর মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করছে। সাধারণ ভোটাররাই ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন কে যোগ্য।

ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা হয়। দুবলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম, আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা কোনো মারামারি, বিশঙ্খলা চাই না। সুন্দর পরিবেশ চাই। যাতে কেন্দ্রে গিয়ে আমার নিজের ভোট নিজে দিতে পারি। কোলাদী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, আরিফ হোসেন বলেন, এর আগে একটি হত্যা হয়েছিল এই নির্বাচন ঘিরে। আবার যদি কোনো ঝামেলা হয় এমন শঙ্কা তো থেকেই যায়। তারপরও পুলিশ প্রশাসনের বেশ তৎপরতা চোখে পড়ছে। ভোটটা শান্তিপুর্ন হলে ভোট দিতে যাবো।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আহমেদ বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৬টি কেন্দ্রের সবগুলোকেই গুরুত্বপূর্ন হিসেবে দেখছি। সবগুলো কেন্দ্রে ব্যাপক নিরাপত্তা থাকবে। ভোটগ্রহণের তিনদিন আগে থেকে আমরা মাইকিং করে বলে দেয়া হবে বহিরাগত কেউ ওই ইউনিয়নে অবস্থান না নেয়। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

পাবনা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ন ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যা যা করণীয়, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাই তাই করা হবে। ধাপে ধাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হবে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, র‌্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা মনে করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় নির্বাচন সুন্দর ও শান্তিপূর্নভাবে শেষ হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভাড়ারা ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩৮ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ২৯৩ জন, পটুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৯৬৪ জন। চেয়ারম্যান পদে তিনজ, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন এবং পুরুষ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন। ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র ১৬টি।

আরো দেখুনঃ