এখনো শীত আসেনি। তার আগেই মাচায় ঝুলছে শীতকালীন সবজি টম্যাটো। পাহাড়ের ঢালে সেসব মাচায় সবুজ আর পাকা লাল টম্যাটোগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মেধাবী ছাত্র খাইরুল আলম। পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে নিজের জমিতে বারি-৪ টম্যাটো চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে চমৎকার। খাইরুল চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ভোলদিঘি কামিল মাদ্রাসার কামিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
খাইরুল জানান, নারায়ণপুর গ্রামে পাহাড়ের ঢালে ১৫০ শতক জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে পলি সেট নির্মাণ করে বারি-৪ টম্যাটো চাষ করেছেন। টম্যাটোর জন্য জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ তার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে তার জমিতে যে পরিমাণ টম্যাটোর ফুল তাতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে তার জমি থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকার টম্যাটো বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
খাইরুল আরও জানান, এখন পর্যন্ত তার জমি থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টাকার টম্যাটো বিক্রি করেছেন।
পেছনের গল্প: নিজের টম্যাটো চাষের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন খাইরুল আলম। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। আমি চাঁদপুর থেকে কুমিল্লায় বাড়িতে চলে আসি। ‘কিছু করে সময়টাকে কাজে লাগানোর চিন্তা করি। আমাদের বাড়ির পাশে ছোট ছোট টিলা রয়েছে। তার নিচে প্রচুর অনাবাদি জমি। সেই জমিগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেই।’
খাইরুল আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫০ শতক জমি তৈরি করি। জমি তৈরির পাশাপাশি সিলেট কমলগঞ্জ থেকে উন্নত জাতের বারি-৪ টম্যাটোর গ্রাফটিং কলমের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি।
‘দিন-রাত পরিশ্রম শুরু করে স্বপ্ন দেখেছি; আমার জমিতে টম্যাটোতে পরিপূর্ণ হবে। আমার স্বপ্ন বাস্তব হচ্ছে।’ গত বছরের সফলতা খাইরুলকে চলতি বছর আরও উৎসাহ জোগায়। এ বছর তিনি দেড় একর বা ১৫০ শতক জমিতে টম্যাটো চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার তিনি ১৭টি পলি সেট তৈরি করে প্রায় ৬ হাজার বারি-৪ টম্যাটোর গ্রাফটিং কলমের চারা রোপণ করেছেন।
খাইরুল জানান, বর্তমানে তার জমিতে টম্যাটো পাকা শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তার জমির টম্যাটোর অনেক চাহিদা। সম্প্রতি তার জমি থেকে টম্যাটো কিনতে পাইকাররা যোগাযোগ শুরু করেছেন।
স্থানীয় ও প্রশাসনের ভাষ্যমতে
স্থানীয় কৃষক আবুল হাশেম মুগ্ধ হয়েছেন খায়রুলের টম্যাটো চাষে। আবুল হাশেম বলেন, ‘খাইরুল শিক্ষিত পোলা। হেতে যেই কামডা করছে, তা কইয়া শেষ করন যাইত না। আমডা মনে করি অইন্য পোলাপাইনডিও যদি হুদাই বইয়া না থাইক্ক্যা কাম করত খায়রুইল্লার মতো ভালো হইত।’ মাসুম আলম নামের এক ব্যবসায়ী খায়রুলের বাগানে এসেছেন। তিনি জানান, কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় তিনি ১০ কেজি টম্যাটো কিনেছেন।
খায়রুল জানান, তার এমন উদ্যোগের নেপথ্যে অবশ্যই কৃষি অফিসের সহযোগিতা অনস্বীকার্য।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা কৃষি সম্পর্কিত যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। শিক্ষার্থী খায়রুল পরিশ্রম করেছে। ‘আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সব রকম পরামর্শ দিয়েছি। অন্যান্য আরও কিছু সহযোগিতা করেছি। নিঃসন্দেহে বারি-৪ জাতের টম্যাটো স্বাদে-গুণে অনন্য।’ অন্য যে কেউ কৃষি কাজ নিয়ে এগিয়ে এলে সব রকমের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
সাইফ/অননিউজ24